২০ ডিসেম্বরের নির্মম ঘটনা নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বিবৃতি
- ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রাজধানীর পূর্বাচলে সড়ক দুর্ঘটনায় বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, ২০ ডিসেম্বর রাতে বুয়েটে একটা প্রোগ্রাম চলাকালে আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী একত্রে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলাম। এমতাবস্থায় আনুমানিক রাত তিনটার পরে আমরা পূর্বাচল নীলা মার্কেটের সামনে ৩০০ ফিট রাস্তায় আমাদের তিন বন্ধু, বুয়েট সিএসই (২০২১) ব্যাচের ছাত্র মোহতাসিম মাসুদ (নজরুল হল), অমিত সাহা (আহসানুল্লাহ হল) এবং মো: মেহেদি হাসান খানের (নজরুল হল) একটি দুর্ঘটনার খবর জানতে পারি। খবর জানতে পেরে আমরা বারবার তাদের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকি এবং কিছুক্ষণ পর একজন পথচারী অমিতের ফোন রিসিভ করেন। তার মাধ্যমে জানতে পারি, আমাদের তিন বন্ধু গুরুতর আহত একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা তৎক্ষণাৎ সেই পথচারীর থেকে ঘটনাস্থলের লোকেশন নিয়ে সেখানে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হই।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমরা মাসুদ, অমিত এবং মেহেদিকে অবচেতন অবস্থায় পাই। তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার ব্রিগেডের সাহায্যে আমরা তিনজনকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি দু’জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
একই সময়ে বাকি শিক্ষার্থীরা দলে দলে ঘটনাস্থল এবং কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে তারা দেখতে পায়, দুর্ঘটনায় জড়িত প্রাইভেটকারটির চালক ও সহযাত্রীদের প্রত্যক্ষদর্শী এবং পথচারীরা ঘিরে রেখেছে। উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীর কথা শুনে এবং ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে আমরা যা জানতে পারি, তা হলো-
অমিত, মাসুদ এবং মেহেদিকে পূর্বাচল ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট মোড়ের ওপরের টার্নিংয়ে ডিউটিরত পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য দাঁড় করায়। এ সময় পেছন থেকে একটি প্রাইভেটকার বেপরোয়া গতিতে এসে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলসহ তিনজনকে আঘাত করে। ফলে তারা তিনজন সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ছিটকে পড়েন ।
প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন মুবিন আল মামুন (সাদমান), তার সাথে ছিলেন মিরাজুল করিম এবং আসিফ চৌধুরী। উল্লেখ্য, চালক সাদমান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চালকের বাবাকেও সেখানে উপস্থিত দেখতে পায়। পরবর্তীতে তাদের প্রাইভেটকার পর্যবেক্ষণ করে আমরা অ্যালকোহল এবং মদজাতীয় নেশাদ্রব্যের উপস্থিতি পাই।
কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছায়। পুলিশ প্রাইভেটকারের চালকসহ তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রথমে রূপগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং পরে তাদেরকে রূপগঞ্জ থানায় নেয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে থানায় পৌঁছায়। থানায় ঘটনার বিবরণ জানার পরে কর্তব্যরত এসআই মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে অসহযোগিতামূলক আচরণ করতে থাকেন।
এ সময় আমরা আমাদের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করি এবং আনুমানিক সকাল আটটায় আরো একদল শিক্ষার্থী বুয়েটের কতিপয় শিক্ষক, চিফ সিকিউরিটি অফিসার এবং হেড গার্ডসহ থানায় উপস্থিত হন। তখন থানায় কোনো ওসি ছিলেন না। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বিলম্ব করতে থাকেন। ঘণ্টাখানেক পর ওসি থানায় আসেন এবং শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেন। এ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং চালকের পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে মামলার ঘটনা প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্তের মা নানাভাবে শিক্ষার্থীদের মামলা থেকে দূরে থাকতে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা জানান। এক পর্যায়ে ছেলে মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল শুনে তিনি বলেন, তার ছেলে ড্রোঙ্ক হলেও ওরা (শিক্ষার্থীরা) অত রাতে ওখানে কী করছিল! এ রকম অনভিপ্রেত মন্তব্য এবং প্রভাব খাটানোর চেষ্টায় বুয়েটের আপামর শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়।
অবশেষে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে মামলার ড্রাফট লেখার কাজ শুরু হয়। সড়ক আইন ২০১৮ ১৯৮ এবং ১০৫ ধারায় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে নিহত মাসুদের লাশ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়। একই সময়ে কতিপয় শিক্ষার্থীসহ অভিযুক্তদের ডোপ টেস্টের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) পাঠানো হয়। রূপগঞ্জ থানা পুলিশ গাড়িচালকসহ গ্রেফতার এ তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠান। বিচারক আগামী রোববার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে কাল সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি আজ (রোববার) শুনানির মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চলতে থাকবে। বিজ্ঞপ্তি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা