২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জরুরি সভা

যথাসময়ে পাঠ্যবই চান উপদেষ্টা সমস্যা জানালেন প্রেস মালিকরা

-

- সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল গঠন
- এনসিটিবি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল
- খোঁজ নিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ

যেকোনো উপায়ে বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দফতর। যদিও গত ৫ আগস্টের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই নতুনভাবে শুরু করতে হয়েছে। এর মধ্যে সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকায় নতুন বছরের শুরুতে পরিবর্তিত সিলেবাসে নতুন বই ছাপা এবং সেই বই যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হচ্ছে সরকারকে। অন্য দিকে প্রেস মালিকরা বলছেন, দ্রুততম সময়ে বই ছাপার কাজে আন্তরিক হলেও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এবারের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে নিয়োজিত প্রথম সারির ২০ থেকে ২৫ জন প্রেস মালিককে নিয়ে জরুরি সভা করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টরা। সভায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং সরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও দফতরের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রেসমালিকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে শিক্ষা উপদেষ্টা সেগুলো দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এর মধ্যে আজ শুক্রবার থেকেই এনসিটিবিতে খোলা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল। একই সাথে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বিতরণ ও নিয়মিত মনিটরিং সংশ্লিষ্ট কাজে সম্পৃক্ত এনসিটিবির কর্মকর্তাদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।

এ দিকে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিটিবিতে এসে শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে পাঠ্যবই তুলে দেয়ার প্রস্তুতি বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নিয়েছেন জুলাই আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি এনসিটিবির চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে সামগ্রিক বিষয়ে খোঁজখবরও নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সভায় আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই ছাপা শেষ করে স্কুলে পৌঁছতে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। আর অবশ্যই মাধ্যমিকের তিনটা আবশ্যিক বই ছাপা শেষ করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে হবে ১ জানুয়ারি। একই সাথে ২০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের সব শ্রেণীর বই ছাড়া ও বিতরণেরও নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সভায় প্রেস মালিকরা শিক্ষা উপদেষ্টাকে জানান, বেশ কয়েকটি কাগজের মিল মালিক সিন্ডিকেট করে কাগজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে তাদের খরচও অনেক বেড়ে গেছে। আবার ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় টাকাও তারা তুলতে পারছেন না। এতে দৈনন্দিন খরচ বা ব্যয় মেটানোর জন্য প্রেস মালিকদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এ ছাড়া বইয়ের কভার পেজের জন্য আমদানি করা আর্ট কার্ডের দামও সম্প্রতি বেড়ে গেছে। আগে যেখানে এক মেট্রিক টন আর্ট কার্ড আমদানি ব্যয় ছিল সর্বোচ্চ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা সেই দাম এখন এক লাখ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দাঁড়িয়েছে। এতে প্রেস মালিকদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান তারা।

সভায় কয়েকজন প্রেস মালিক জানান, তারা ব্যাংক থেকে চাহিদামতো টাকা তুলতে পারছেন না। যদিও শর্ত মোতাবেক প্রাক্কলিত দরের একটি নির্দিষ্ট অংশের টাকা ব্যাংক থেকে দেয়ার কথা বলা আছে; কিন্তু ব্যাংকগুলো এককালীন টাকা না দিয়ে কয়েকটি ধাপে বা একাধিক কিস্তিতে টাকা দেয়ায় সমস্যা হচ্ছে প্রেস মালিকদের। সভায় এক প্রেস মাালিক জানান, হাতে গোনা কয়েকটি কাগজ মিল থেকেই মূলত পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য কাগজ সংগ্রহ করেন তারা। এখন এই মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ বছর তানাকা পেপার মিল, আম্বার পেপার মিল, লিপি পেপার মিল এবং ফ্রেশ পেপার মিল বই মুদ্রণের কাগজ সরবরাহ করছে। তবে এদের মধ্যে বসুন্ধরাসহ দু-একটি মিল দাম নিয়ে সিন্ডিকেট করায় বেকায়দায় পড়েছেন প্রেসমালিকরা। অবশ্য যদি আরো কিছু পেপার মিল থেকে বই মুদ্রণের কাগজ সংগ্রহ করা যায় তাহলে বর্তমানে কাগজের যে সঙ্কট রয়েছে সেটা সমাধান করা আরো সহজ হতো বলে মনে করছেন তারা। সূত্র জানায়, অন্যান্য পেপার মিলের মধ্যে কাগজ সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে আন নূর পেপার মিল, ব্যাজ পেপার মিল, রশিদ পেপার মিল, মল্লিক পেপার মিল, ডিজিটাল পেপার মিল এবং গাজীপুর পেপার মিলের।

প্রেস মালিকদের বক্তব্যের পর এনসিটিবির চেয়ারম্যান সভায় বলেন, প্রকৃত অর্থে মার্কেটে কাগজের কোনো সঙ্কট নেই। এ ছাড়া আমরা একেবারে মানহীন কোনো কাগজ মিলের কাগজ ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারি না। এতে বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আমরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি। বিশেষ করে কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর, ব্রাইটনেস, অপাসিটি, জিএসএম এসব বিষয়ে আমরা কোনো ধরনের ছাড় দেবো না।
গতকালের জরুরি এই সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসানসহ আরো অনেকে। উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট রজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে এবার ১২ বছর আগের শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক-মাধ্যমিকের শিক্ষাব্যবস্থা। ফলে নতুন বছরে ছাপা মোট বইয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ১৬ লাখ কপি। একই সাথে এবার বাড়ছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার বাজেটও।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ইউনূসসহ ২০ জন উপদেষ্টার উপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর ভুয়া এটিজেএফবি’র সভাপতি তানজিম, সাধারণ সম্পাদক বাতেন নির্বাচন ইস্যুতে সরকারকে চাপে রাখতে চায় বিএনপি আল আজহার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান প্রফেসর ইউনূসের উপদেষ্টা হাসান আরিফ আর নেই হাসিনাকে উৎখাত করে ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা বাংলাদেশ দ্রুত নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত আমরা দুর্নীতি করব না কাউকে করতেও দেবো না : ডা: শফিক পূর্বাচলে প্রাইভেট কারের চাপায় বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু তিনটি কর্মসূচিতে ১১৬ কোটি ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক ভারত!

সকল