বিচ্ছিন্ন কব্জির সফল প্রতিস্থাপন পঙ্গু হাসপাতালে
- পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৫
মো: আমির হামজা (২১) ঢাকার মাতুয়াইলে একটি কোম্পানির বাঁধাইয়ের কারখানায় কাজ করতেন। গত মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে কাজ করার সময় কারখানায় কাটিং মেশিনের ত্রুটিতে তার ডান হাতের কব্জি শরীর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের এক দল চিকিৎসক ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় সফলভাবে বিচ্ছিন্ন হাতকে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এতে আশার আলো দেখছেন তার পরিবার।
আমির হামজার বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার হাটাইল মধ্যমিলিয়া গ্রামে। বাবা মো: চাঁন মিয়া ঢাকায় একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করেন। সেই সুবাদে ছেলেকেও ঢাকায় এনে চাকরি দিয়েছেন।
আমির হামজার শরীর থেকে কব্জি বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর নিশ্চত করেছেন ছোট ভাই আবুল কালাম এবং পঙ্গু হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা: মো: দ্বীন ইসলাম মিঠু। বর্তমানে আহত আমির হামজা ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
জানা যায়, আমির হামজার বাবাও ঢাকার একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। দুর্ঘটনায় শরীর থেকে হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাৎক্ষণাৎ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়, উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে হাতের প্রতিস্থাপন কাজ শুরু করেন। প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী প্রচেষ্টায় চিকিৎসকরা সফল প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হন।
পাঁচ সদস্যের চিকিৎসক টিমের নেতৃত্ব দেন পঙ্গু হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: অভিজিত সরকার, সাথে ছিলেন হেন্ড সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিপুল কুমার দাস, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডা: ইসতিয়াক আহম্মেদ, মেডিক্যাল অফিসার ডা: দ্বীন ইসলাম মিঠু, সহকারী ও অন্যরা।
এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা: মো: দ্বীন ইসলাম মিঠু জানান, ডান হাতের কব্জি শরীর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাওয়া আমির হামজা নামক এক ব্যক্তি এই হাসপাতালে ভর্তি হলে আমরা দ্রুত একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করি। প্রাথমিকভাবে আমরা রোগীর শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করে এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা ওটির কাজ আরম্ভ করি, প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টার পর পাঁচজন ডাক্তার মিলে একটি সফল প্রতিস্থাপন করতে আমরা সক্ষম হই। শরীর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া কোনো অঙ্গ সমানভাবে কাটে গেলেও ৬ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেটা প্রতিস্থাপন সম্ভব হতে পারে। তবে এটা খুবই সেনসেটিভ ব্যাপার। এর আগে বাংলাদেশে মাত্র দুইবার এ ধরনের অপারেশন হয়েছে।
আহত আমির হামজার ছোট ভাই কলেজ শিক্ষার্থী আবুল কালাম জানান, আমার বড় ভাই একটি দুর্ঘটনায় তার ডান হাত শরীর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায় কারখানার লোকজন তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তারদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হয়তো আমার ভাইয়ের একটি হাত ফিরে পেতে যাচ্ছি , আর এ জন্য প্রথমেই মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শোকরিয়া জানাচ্ছি, সেই সাথে আমি ডাক্তারদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের পরিবার এখন আশার আলো দেখছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা