‘ওসমান পরিবারের’ প্রভাবমুক্ত নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে নির্বাচন আজ
- নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৪
শত বছর পুরনো নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেড। জেলার অভিজাত শ্রেণীর লোকজন এই ক্লাবের সদস্য। আজ শনিবার এই ক্লাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত প্রার্থীরা। তবে ৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতিতে এবারের নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচন বিগত সময়ের তুলনায় আলাদা। বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের পতন হলে দেশ ছেড়ে পালান প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যরা। ফলে, তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই এবারের নির্বাচনে।
দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবটির নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের হাতে। গত ১৬ বছর ঘুরে-ফিরে ওসমান পরিবারের সদস্য কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠজনরাই এই ক্লাবের নেতৃত্বে ছিলেন। ফলে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তারা ছিলেন বহাল তবিয়তে।
শুধু তাই নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শামীম ওসমান তার অনুসারী সন্ত্রাসী বাহিনীকে নিয়ে এই ক্লাবে বসে বৈঠক করেছেন। ক্লাবের ভেতরে অবস্থান নিয়ে, সেখান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বেরিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী-জনতার উপর মুহুর্মুহু গুলি ছোড়ে শামীম ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনী। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা এই ক্লাবে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটও চালায়।
তবে, শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে প্রেক্ষাপট বদলেছে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমান, তার বড় ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি একেএম সেলিম ওসমান ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদেরও অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আবার কেউ দেশের মধ্যেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। কয়েকজন আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় গ্রেফতারও হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওসমান পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠরা অনেকেই এ ক্লাবের সদস্য। শামীম ওসমান, তার ভাই সেলিম ওসমান, শামীমের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু, এহসানুল হাসান নিপু এই ক্লাবের সদস্য। তাদের মধ্যে টিটু এ ক্লাবের একাধিকবারের সভাপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ক্লাবের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছিল।
এবার তারা পলাতক থাকায় সরাসরি তাদের কোনো প্রভাব যেমন নেই, তেমনি ভোট দিতে আসার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। ফলে, এবারের নির্বাচন অনেকটা ‘ওসমান প্রভাবমুক্ত’ বলছেন ক্লাবের সদস্যরা। তবে বিগত সময়ে ওসমান পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন এমন অনেকেই আবার ‘ভোল পাল্টে’ ভালো অবস্থানে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সদস্যের তালিকায় ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, শামীম ওসমানের বেয়াই ফয়েজ উদ্দিন লাভলু, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সহসভাপতি রামু সাহা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ রনিও রয়েছেন। যদিও তারা লাপাত্তা। এদিকে, হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা। ক্লাবের সদস্য হলেও তারা ভোট দিতে আসবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, সব দিক বিবেচনায় রেখে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। শেষ মুহূর্তে ভোটারদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। পার করছেন ব্যস্ত সময়। আজ শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ।
এ নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দু’জন। তাদের মধ্যে এম সোলায়মান নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের তিনবারের সভাপতি। নেতৃত্ব দিয়েছেন সুতা ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের। অপর প্রার্থী মাহবুবুর রশীদ জুয়েল এর আগে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। জুলফিকার স্টিল মিলের স্বত্ব¡াধিকারী জুয়েল স্টিল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। উভয় প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা প্রতিশ্রুতি সামনে রেখেছেন তারা।
এ নির্বাচনে ১১টি পদের জন্য ১১ জনকে নির্বাচিত করবেন ভোটাররা। সভাপতি ছাড়ও দু’জন সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন এবং বাকি আটজন হবেন পরিচালক।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদ পেতে লড়ছেন ইকবাল হাবিব ও মারুফ আহমেদ বাবু। অপরদিকে দ্বিতীয় সহসভাপতি পদে লড়ছেন মো: সাইদুল্লাহ হৃদয়, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুজ্জামান মৃধা, খাজা এবায়দুল হক টিপু।
এ ছাড়া আটটি পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আব্দুল কাদির মাহবুব, কাজী আব্দুস সাত্তার, কৌশিক সাহা, মো: জাহিদ, অ্যাডভোকেট ইন্দ্রজিৎ সাহা দীপক, দিলারা মাসুদ ময়না, হারুন-অর-রশিদ, খান হোসেন, মো: তৌহিদুল ইসলাম খান, তাইজুদ্দিন আহমেদ, সেলিম রেজা।
নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান আনিসুল ইসলাম সানি। এ ছাড়া কমিশনে রয়েছেন আলহাজ সাইফুল আলম, কুতুবউদ্দীন আহমেদ, অ্যাডভোকেট মো: রাকিবুল হাসান শিমুল, মোহাম্মদ হোসেন মিঠু এবং নির্বাচন আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো: জাকির হোসেন, সদস্য মো: নবী হোসেন, খন্দকার মাহাবুব হোসেন (বাবু)।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা