১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পদোন্নতিতে বৈষম্যের শিকার প্রাথমিক শিক্ষা পরিবীক্ষণ ইউনিটের কর্মচারীরা

-


একই বিধিতে নিয়োগ, একই সাথে চাকরিতে যোগদান। অথচ পদোন্নতিতে নেই কোনো মিল। দীর্ঘ দিন ধরে চরম বৈষম্যের শিকার বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা। যদিও প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে এই ইউনিট শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই ইউনিটের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালের ১৭ আগস্ট। কিন্তু শুরু থেকেই নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন এই ইউনিটের ৪৪ জন কর্মচারী। এই বৈষম্যের প্রতিকার চেয়ে এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের স্ট্যাটাস-সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০০৮ সালের ১৫ এপ্রিল তারিখে জারিকৃত পত্রে সংক্ষুব্ধ ছয় কর্মচারীর প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে করা দু’টি মামলার রায়ও কর্মচারীদের পক্ষেই আসে। কিন্তু তারপরেও নানা জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টির আজও কোনো সমাধান হয়নি।

এ দিকে গত ৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা পরিবীক্ষণ ইউনিটকে পুনরুজ্জীবিত করাসহ বিদ্যামান সঙ্কট ও বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় এ-সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে সভা সূত্রে জানা গেছে।
বৈষম্যের শিকার কর্মচারীরা জানান, শিক্ষা সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের আমরা যারা তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আছি, আমরা চাকরির শুরু থেকে একেবারে অবসরে যাওয়ার দিন পর্যন্ত একই পদে (স্ট্যাটাস) এবং একই গ্রেডে থাকি। অথচ আমরা একই নিয়োগবিধি এবং একই নিয়মে চাকরিতে যোগদান করেও সচিবালয়ের, বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যদের মতো কোনো ধরনের পদোন্নতির সুযোগ পাই না। বিষয়টি নিয়ে ইউনিটের কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা আর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭ (ক) অনুযায়ী সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা আইন-১৯৯০ প্রণীত হয়। ওই আইনের প্রয়োগার্থে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক স্মারক নং (সম/সওব্য/টিম-৩(২)/৬১/৯০-৪২)-এর মাধ্যমে সচিবের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কোষটি সৃষ্টি করা হয়। সুতরাং মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা কোষের মতো এই কোষটিও মন্ত্রণালয়ের অবিচ্ছেদ্য একটি অঙ্গ। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ইউনিটের মতো এটিও একটি স্বতন্ত্র কোডের (কোড নং ১২৪০১০১) মধ্যেই এর অবস্থান।

সূত্র মতে, বাংলাদেশ সচিবালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য প্রচলিত নিয়োগবিধির আলোকে প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এবং পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই ইউনিটের কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। এমনকি এই ইউনিটের কর্মচারীদের সিলেকশন গ্রেড স্কেল, টাইম স্কেল ইবি ক্রস, চিকিৎসা ছুটি, অর্জিত ছুটিসহ সব প্রকার কার্যক্রমের অনুমোদন কর্র্তৃপক্ষ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ের ন্যায় এই ইউনিটের ‘শাখা সহকারীর’ পদটি ফিডার পদধারী হওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে পদবি পরিবর্তন করে ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ করা হয়েছে। একইভাবে এখানকার হিসাবরক্ষককে সিলেকশন গ্রেড স্কেল প্রদান করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর সভায় প্রাথমিক শিক্ষা পরিবীক্ষণ ইউনিটকে আরো গতিশীল করতে ও বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি হলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. আবু শাহীন মো: আসাদুজ্জামান আর সদস্যসচিব হলেন যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) নুরুন্নাহার। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি (অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদ মর্যাদার), প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের একজন প্রতিনিধি এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুারোর একজন প্রতিনিধি।

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের কর্মচারীদের স্ট্যাটাস জটিলতা এবং তাদের পদোন্নতিতে যে বৈষম্য প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মদ মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা চেষ্টা করছি এই ইউনিটকে একটি শক্তিশালী ইউনিট হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করতে। ইতোমধ্যে আমাদের কাজও অনেক এগিয়েছে। কয়েকটি সভাও হয়েছে। এই ইউনিটের কর্মচারীদের পদোন্নতিসংক্রান্ত যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে আশা করছি এটা আর থাকবে না। কেননা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবীক্ষণ ইউনিট যখন শক্তিশালী হবে তখন এখানকার বিদ্যামান সঙ্কট ও সমস্যাগুলোও অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই সমাধান করা হবে। দীর্ঘ দিন তো এই ইউনিট নিয়ে তেমন কোনো কাজই হয়নি। এখন যেহেতু কাজ শুরু হয়েছে, আশা করা যায় সব বৈষম্যের অবসানও ঘটবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement