১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বায়ুদূষণ রোধ কর্মসূচিতে বক্তারা

প্রয়োজন ছাড়া উন্নয়ন দরকার কি না ভাবতে হবে

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে কর্মপরিকল্পনা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি : নয়া দিগন্ত -


ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে অবিলম্বে জরুরি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেছেন আমাদের নির্মল বায়ু দেন, আমরা বাঁচতে চাই। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ই-আরকি ও জনভাষ্য নামের সংগঠন এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে জরুরি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিতে উপস্থিত বক্তারা বলেন, ‘আমরা ঢাকাবাসী নির্মল বায়ু চাই, একটু শ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারি’। তাদের ভাষ্য, বিশ্বের বায়ুদূষণে সবচেয়ে বিপজ্জনক হওয়ার পরও ঢাকায় বায়ুদূষণে তেমন কোনো পদক্ষেপ আগেও নেয়া হয়নি এখনো নেয়া হচ্ছে না।
বক্তব্যে ছাত্র, পরিবেশ ও জলবায়ু কর্মী নয়ন সরকার বলেন, ঢাকার বাতাস এখন বিষাক্ত। প্রতিদিন আমরা শ্বাস নিচ্ছি এমন এক পরিবেশে, যা আমাদের জীবনকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দূষণ আমাদের স্বাস্থ্য, আয়ু এবং মানসিক শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। আমরা কি এভাবে বাঁচতে চাই? নাকি সময় এসেছে এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর? ঢাকা শহর বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর। দূষিত বায়ু আমাদের অজান্তেই কতটা ক্ষতি করছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণা ও প্রতিদিনকার বাস্তবতার মাধ্যমে। এই নীরব ঘাতকের প্রভাব আর কত দিন আমাদের সহ্য করতে হবে?
নাট্য পরিচালক সুমন আনোয়ার বলেন, আমরা জানি রাজধানী যেভাবে দিন দিন বড় হচ্ছে তাতে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা বুকভরে বাতাস নিতে পারছি না। রাজধানীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার দায়িত্ব সরকারে, সেখানে আমাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। নদীদূষণ, বায়ুদূষণ বন্ধ করতে হবে।

নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি বলেন, রাজধানীর বায়ুদূষণ এমনি এমনিতে হয় না। রাষ্ট্রযন্ত্রের দায় আছে, আমলাদের দায় আছে, প্রয়োজন ছাড়া উন্নয়ন দরকার আছে কি না ভাবতে হবে। আগের সরকার শহরবাসীর জন্য ক্ষতিকর কাজ ছাড়া তেমন কিছুই করেনি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার এ দেশের জনগণের জন্য কাজ করবে আমরা সেই আশা করি।
কর্মসূচি থেকে ১২ দফা দাবিও পেশ করা হয়। সেগুলো হলো প্রতিদিন ২ বেলা করে সড়কে পানি ছিটাতে হবে। সড়কে যেসব খোঁড়াখুঁড়ি/ ফুটপাথ/ অন্যান্য কাজ বর্তমানে চলছে তা নির্মাণবিধি মেনে ৭ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে নয়তো এই দুই মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। নির্মাণবিধি মেনে নির্মাণ কাজ করার কড়াকড়ি নির্দেশনা দিতে হবে; বায়ু মানে অবনতি হলে নির্মাণ কাজও বন্ধ করার নির্দেশনা দিতে হবে। গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা দিয়ে যেসব পণ্যবাহী হাজার হাজার ট্রাক ও ফিটনেসহীন ট্রাক বালু, ইট নিয়ে শহরে প্রবেশ করে সেসব মালামাল ঢেকে নেয়ার নিয়ম কার্যকর করতে হবে, নজরদারি বাড়াতে হবে; প্রয়োজনে বাইপাস বোর্ড দিয়ে সেগুলো চলতে বাধ্য করতে হবে। পরিস্থিতির অবনতি হলে এসব মালবাহী ট্রাক শহরে প্রবেশ সীমিত থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
ফিটনেসহীন যানবাহন সড়ক থেকে সরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ এবং শিল্প কলকারখানার দূষণ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশব্যাপী বর্জ্য না পোড়ানো ও পরিষ্কারের সময় ধুলোবালি যাতে না উড়ে এ জন্য এলজিআরডি থেকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে কড়াকড়ি নির্দশেনা দিতে হবে।
জনগণকে সচেতন করতে হবে। মাস্ক পরিধান করতে উৎসাহী করতে হবে। শহরের ডিসপ্লেগুলোতে অথবা ডিওই কর্তৃক ডিসপ্লে বসিয়ে লাইভ বায়ু মান দেখানো ও সতর্কতা প্রচারণা করতে হবে এবং বায়ুর মান বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গেলে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করতে হবে এবং স্কুল-কলেজসহ সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement