কেরানীগঞ্জে ৫০ লাখ টাকায় ২ আওয়ামী লীগ নেতার অপরাধ রফাদফা
- রাকিব হোসেন
- ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ধর্ষণ, ভাঙচুর, বিস্ফোরক আইন ও ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়া একাধিক মামলার আসামি ব্যবসায়ী দুই আওয়ামী লীগ নেতা স্বাধীন শেখ ও মুসলিম ঢালী ৫০ লাখ টাকায় তাদের সব অপকর্ম রফাদফা করেছেন। এই দফারফার বিনিময়ে মিলেছে- তারা এলাকায় থাকবেন, ব্যবসা পরিচালনা করবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা থেকে অব্যাহতির আশ্বাস। বিষয়টি কেরানীগঞ্জে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দিনমজুর, রিকশাচালক, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় তৈরী পোশাক উৎপাদন কেন্দ্র ঢাকার কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ এলাকার গার্মেন্টপল্লী। এলাকাটি ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে গার্মেন্টপল্লী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কালীগঞ্জ এলাকায় এ পর্যন্ত ছোট বড় ৫০ হাজার গার্মেন্ট কারখানা ও পাঁচ লাখ শ্রমিকের কর্মস্থলে পরিণত হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি তৈরী পোশাক কিনে থাকেন। গার্মেন্টপল্লী এলাকার জমির দাম এখন আকাশচুম্বী। টাকা থাকলেও গার্মেন্টপল্লীতে জমি, মার্কেট বা দোকান পাওয়া দুষ্প্রাপ্য। এলাকাটিতে গত ১৫ বছর শাসন করে আসছেন সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা স্বাধীন শেখ ও মুসলিম ঢালী। তাদের অত্যাচারে গত ১৫ বছর বিএনপি ও জামায়াতের ব্যবসায়ীরা ছিলেন নির্যাতিত। তারা এলাকায় দখলবাণিজ্যের রামরাজত্ব কায়েম করেন। ১৫ বছর ধরে তারা বিনা নির্বাচনে ঐতিহ্যবাহী কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করে রাখেন। স্বাধীন শেখ ও মুসলিম ঢালীর বিরুদ্ধে রয়েছে ১০টি মার্কেট দখল, দোকান বিক্রি ও একাধিক জমি দখল করে বিক্রি করার অভিযোগ। এই দুই আওয়ামী লীগ নেতা গত ১৫ বছরের দখলদারিত্বে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা। জুলাই বিপ্লবে এই দুই নেতার নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে হামলা ও অর্থ জোগানদাতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাসী লেলিয়ে ও অর্থ জোগান দিয়ে আন্দোলন দমানোর সুনির্দিষ্ট ভিডিও রয়েছে এলাকাবাসীর কাছে। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ, স্বাধীন শেখ ও মুসলিম ঢালী কেরানীগঞ্জ থেকে পালিয়ে যান।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা স্বাধীন শেখ ও মুসলিম ঢালী দেশের বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দলের ঢাকা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের সাথে আঁতাত করে ৫০ লাখ টাকা রফদফায় আপস করেছেন। ‘ন’ আদ্যাক্ষর দিয়ে নামের এই নেতা ওই রাজনৈতিক দলের একাধারে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য, ঢাকা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেরানীগঞ্জ শাখার সভাপতি। ময়লা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত প্রতিটা সেক্টরে তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্টের পর তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা স্বাধীন শেখের কাছ থেকে ৩০ লাখ এবং মুসলিম ঢালীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা রফা দফায় তাদেরকে এলাকায় থাকার অনুমতি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুমতি দিয়েছেন, তাদের স্ব স্ব স্থানে ব্যবসা পরিচালনার। আশ্বাস দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহারের। ওই নেতার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নেতা স্বাধীন শেখ ও মুসলিম ঢালী কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টপল্লী এলাকায় দলবল নিয়ে প্রবেশ করেছেন। শুরু করেছেন ব্যবসাবাণিজ্য। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাদের এলাকায় আগমনে ত্যাগী নেতারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। এলাকাবাসীর বক্তব্য- ১৭ বছরের অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন যাদের মাধ্যমে হয়েছে তারা এখন টাকার বিনিময়ে রামরাজত্ব কায়েম করছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, তাহলে কিসের বিপ্লব, কিসের ২৪-এর স্বাধীনতা, কিসের জন্য আমরা ত্যাগ স্বীকার করলাম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা