ঢাকা-না.গঞ্জ রেলপথ ঝুঁকিমুক্ত হবে কবে
- কামাল উদ্দিন সুমন নারায়ণগঞ্জ
- ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ এখন অনেকাংশেই মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। অহরহ ট্রেনে কাটা পড়ে হতাহত হচ্ছে মানুষ। ট্রেন স্টেশনে ওঁৎ পেতে থাকা ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে মালামাল হারানোর পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন (৫৫) ট্রেনে উঠার সময় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এবং পরে চলন্ত ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে প্রাণ হারান। রেল সূত্র বলছে, গত ১১ মাসে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ১৬ কিলোমিটার রেলপথে ১৩টি রেল বেরিয়ার ছাড়াও ৪৫টি অবৈধ রেল ক্রসিং রয়েছে। এই ১৩টি রেল বেরিয়ারের প্রায়টিতেই নেই গেইটম্যান। রেল চলাচলের সময় অবৈধ ক্রসিংগুলোতে যানবাহন আটকানো হয় রশি দিয়ে। রেলপথের অনেক স্থানের দুইপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। এতে মানুষজন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বেচাকেনা করে থাকেন।
সূত্র জানায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথটি ১৩৮ বছরের পুরনো। এক সময় বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জ ছিল দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতো মানুষ। বিশেষ করে প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জ থেকে পণ্য পরিবহনে ব্যবহার হতো রেলগাড়ি। কালের পরিক্রমায় বন্দরনগরীর গুরুত্ব কমার সঙ্গে সঙ্গে রেলের সেই ব্যবহারও কমে গেছে।
তবে গত সরকারের আমলে এই রেললাইনকে আধুনিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়। হাতে নেয়া হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ডুয়েলগেজ (ডাবল) রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন এসে এই লাইন হয়েই ঢাকায় প্রবেশ করার কারণে এর গুরুত্ব বেড়ে গেছে। ২০১৭ সালে ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও দীর্ঘ সাত বছরেও তা শেষ হয়নি। বিদেশী দুই কোম্পানির টানাটানিতেই বন্ধ আছে কাজ।
নারায়ণগঞ্জের দুটি স্টেশন শহরের ভেতরে হওয়ায় প্রতিদিন এর প্রধান ও ব্যস্ততম সড়কের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে ট্রেন। উকিলপাড়া এলাকার ২নং রেলগেইট ও চাষাঢ়া রেলগেইট শহরের প্রধান দুটি ক্রসিং। দুটি গেইটের মাঝখানে রেল বেরিয়ার ৮টি হলেও অকেজো হয়ে আছে ৬টি। এতে গেইটের রেল বেরিয়ারের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে দড়ি। যার ফলে নিয়ম না মেনে যানবাহন চলাচলে প্রায়ই হচ্ছে দুর্ঘটনা।
গেইটম্যানরা জানান, ২নং রেলগেইটে ৪টির মধ্যে ৩টিই ভাঙা। রাস্তায় অনেক গাড়ি থাকায় রশি দিয়ে আমরা মানুষদের থামাতে পারি না। মিস্ত্রি এনে ঠিক করা হলেও কিছু দিন পর আবার নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও কাভার্ড ভ্যান আমাদের বেশি ক্ষতি করে। গেইটগুলোর পাশে অবৈধ অটো স্ট্যান্ড থাকায় তারা আমাদের কথা মানে না। আমাদের সাথে বাজে ব্যবহার করে। চাষাঢ়া বালুর মাঠ ক্রসিং এলাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করে। তাই এলাকার মানুষ নিজ উদ্যোগে গেইট করে দুইজন নিয়োগ দেয়। আমরা চাই সরকারিভাবে এখানে গেইটের ব্যবস্থা করা হোক। চাষাঢ়া স্টেশনের ৪টা গেইটের ৩টাই নষ্ট, কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, তারা ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা চাই দ্রুত এটার সমাধান করা হোক।
নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খান বলেন, রেল গেইটের বেরিয়ারগুলো অকেজো ছিল। এগুলো ঠিক করার জন্য মিস্ত্রিকে বলা হয়েছে। দ্রুত সমাধান করা হবে।
এ দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বন্ধ হয়ে যাওয়া ডুয়েলগেজ (ডাবল) রেললাইন প্রকল্পের কাজ শিগগিরই নতুন করে চালু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো: নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্পের কাজ পুনরায় চালু করতে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কাজ সংযোজনও করা হয়েছে। কাজটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’
মো: নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পটির আগের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না কোম্পানির কাজে অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় সঠিকভাবে হয়নি। এ ছাড়া রেললাইন বসানোর ক্ষেত্রেও তাদের কিছু ত্রুটি রয়েছে। এ কারণে কাজ শেষ না করেই চলে যায় চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তবে যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে রেল মন্ত্রণালয় নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক আরও বলেন,এটি বাস্তবায়ন হলে রেলপথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন। পাশাপাশি সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেলওয়ের জমি দখলমুক্ত করার ব্যাপারেও আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করছি। আমাদের এ কাজ চলমান রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা