ভারতীয় মিডিয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে
ঢাবি শিক্ষার্থীদের মতামত- হারুন ইসলাম
- ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সব পেশার জন্যই একটি নৈতিক বিধিমালা থাকে, সাংবাদিকতারও রয়েছে। গণমাধ্যম যেহেতু রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে সেহেতু তাদের মধ্যে নৈতিকতা, বস্তুনিষ্ঠতা চর্চা খুবই জরুরি। তবে ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের পরিবেশনায় সেটা দেখা যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদগুলো দেখলে এই ধারণাই পরিস্ফুটিত হয় যে, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিহীন দেশ। ভারতের সংবাদমাধ্যমের এই প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনসহ সব ধর্মের বর্ণের মানুষ আজ সোচ্চার।
ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই বাংলাদেশের প্রতি আচরণ পাল্টেছে ভারত সরকার। এর আগে, গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে ভারত সরকারের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। আওয়ামী সরকারকে প্রভাবিত করে তারা অনেক সুবিধা নিয়েছে যা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী হিসেবে প্রমাণিত। আওয়ামী লীগের পতনের পর তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায় ভারত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য তারা সংখ্যালঘুদের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে বলে ভারতীয় মিডিয়া বিরামহীন মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এতে ভারতের লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে এবং ভারতবিরোধী মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে।
গত কয়েক মাসে ভারতীয় মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কখনো তারা বলছে বাংলাদেশ হিন্দু নারীদের বস্ত্রহরণ করা হচ্ছে, আবার কখনো অভিযোগ করা হচ্ছে নির্বিচারে হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার বয়ান ও বাস্তবতার কোনো ধরনের মিল নেই। ইতোমধ্যে ফ্যাক্টচেকিংয়ের মাধ্যমে সেসব মিথ্যাচার ধরা পড়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে আবার ফেরানোর জন্যই চেষ্টা করছে ভারত সরকার। ভারতীয় মিডিয়ার প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবাদ জানাচ্ছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি প্রতিবাদ সমাবেশও করছেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ উচ্চারণ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেফতাহুল মারুফ নয়া দিগন্তকে বলেন, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাধিয়ে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুশ করার ষড়যন্ত্র করছে ভারত। মিডিয়ায় অপতথ্য ছড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ভারতের পাতানো ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। তারা চায় দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুনর্বহাল করতে। সব ধর্মের মানুষের প্রতি আমার আহ্বান ফ্যাসিবাদ ও তাদের সমর্থনকারীদের সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আল জাহেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ভারতীয় মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা আমাদের দেশে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়টি নিয়ে বেশ সচেতন। আমরা মনে করি মিডিয়ার কাজ হওয়া উচিত সত্য ও নিরপেক্ষ তথ্য প্রচার করা। প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে যেকোনো দেশের সামাজিক বন্ধন দুর্বল হতে পারে এবং ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়। ভারতীয় মিডিয়ার প্রকৃত সত্য জানার জন্য নির্ভরযোগ্য সূত্র খোঁজা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের একজন অমুসলিম শিক্ষার্থী নয়া দিগন্তকে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারকে এদেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ হটিয়েছে। ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েই দেশের জনগণের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। ভারতীয় মিডিয়া যেভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ সব ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা ভারত সরকার ও ভারতীয় মিডিয়াকে বলতে চাই, অবিলম্বে এসব অপপ্রচার বন্ধ করুন। দুই দেশের সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিয়ে যান।
আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমরান নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তাদের প্রোপাগান্ডা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে। ভারতের গণমাধ্যমের ওপর আমাদের আহ্বান থাকবে দেশে মাইনরিটি ভায়োলেন্সের বিষয়ে তথ্যগুলো যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে সেগুলো সুস্পষ্ট মিথ্যাচার। এতে দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করছে। ভারতীয় মিডিয়ার প্রতি আহ্বান থাকবে, বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ নিয়ে সঠিক তথ্যটি তুলে ধরুন। এতে দু’দেশের মানুষের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা