ভারতের চ্যানেলে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের ভুয়া প্রতিবেদন
পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে মিথ্যা বলতে বাধ্য করার অভিযোগ- ফরিদপুর প্রতিনিধি
- ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে কলকাতা প্রবেশ করতেই কেড়ে নেয়া হচ্ছে পাসপোর্ট। আর তারপর সেখানকার বিভিন্ন চ্যানেলের প্রতিবেদকদের শিখিয়ে দেয়া কথা মতো সাক্ষাৎকার না দিলে পাসপোর্ট দেয়া হবে না বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এরপর সেই সব বাংলাদেশী নাগরিকদের মুখ থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের নানা কল্পকাহিনী বানিয়ে তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
ভারতের দু’টি চ্যানেলে সর্বশেষ প্রচারিত সাক্ষাৎকারের সত্যতা জানতে সরেজমিন অভিযোগকারীদের বাড়িতে গেলে তাদের অভিভাবকরাই এসব ষড়যন্ত্রের তথ্য জানান। প্রথমে তারা লোকমুখে জানতে পারেন ওই সাক্ষাৎকারের কথা। পরে চ্যানেলে সন্তানের মুখে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর এই ধরনের নির্যাতনের বর্ণনা শুনে তারা বিস্মিত। এ ঘটনায় পুত্রের এই কাণ্ডে তারা বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারের কাছে ক্ষমাও প্রার্থনা করেন।
ভারতের এবিপি আনন্দ টিভিতে একটি সাক্ষাৎকার দেন শুভ কর্মকার নামের এক ব্যক্তি। তিনি ফরিদপুর শহরের নীলটুলীর স্বর্ণকার পট্টির নিউ গিনি ভবন জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী সুনীল কর্মকারের ছেলে। ওই সাক্ষাৎকারে শুভ দাবি করেন, বাংলাদেশের অবস্থা খুবই খারাপ। হিন্দুদের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে বাড়িঘর দখল করা হচ্ছে। মন্দির-প্রাসাদ পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য খারাপ লাগে। তাদের মারধর করা করা হচ্ছে। মা বোনদের ওপরে নির্যাতন করা হচ্ছে। রাতে দোকান থেকে বাড়িতে যাওয়ার পর ভাবতে হয় সকালে দোকানের উদ্দেশে আবার বের হতে পারবো কি না!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভ কর্মকারের এই বক্তব্য জানাজানি হলে নিন্দার ঝড় ওঠে। স্থানীয় সাংবাদিকেরা সরেজমিন বিষয়টি জানতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। এসময় শুভর বাবা সুনীল কর্মকার ও মা দু’জনেই তাদের ছেলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। শুভর মা মিসেস সুনীল বলেন, তার ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই এমন। কোনো কথা শোনে না। এজন্য আমরা অনেক দুঃখিত। আমরা কখনোই এই দেশে কোনো নির্যাতনের শিকার হইনি। আমার মেয়েরা, ভাসুরের মেয়েরা তারাও কখনো এ ধরনের হামলার শিকার হয়নি। ভারতের ওই সাংবাদিকরা খারাপ। তারা ইচ্ছা করেই এমন কথা রটিয়েছে। আমরা বাংলাদেশে নিরাপদেই রয়েছি।
শুভর বাবা সুনীল কর্মকার বলেন, ওর এই কথা শুনে আমরা নিজেরাই অবাক হয়ে গেছি। ও কী করে এই কথা বলল ভাবতেও পারছি না। আমরা দেশে কোনো ধরনের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হইনি। আমি ওকে ফোন করেছিলাম ওর এই কথা শুনে। ও বলল, পেট্রাপোলে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার পরে সেখানকার সাংবাদিকেরা ওর পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। এরপর ওদের শিখিয়ে দেয়া মতো কথা না বললে পাসপোর্ট দিবে না বলে ভয় দেখায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক নষ্টের উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে।
এদিকে, দ্য ওয়াল নামে আরেকটি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজেকে বাংলাদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে দুই মাস ধরে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি অমিয় সরকার। জানা গেছে, অমিয় সরকার ২০২১ সালের নভেম্বরে গঠিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটির ৮ নম্বর সহসভাপতি ছিলেন। পরের বছর অনুমোদিত কমিটি হতে তাকে বাদ দেয়া হয়। অবশ্য তার আগেই এই অমিয় সরকারের নাম ছড়িয়ে যায় খন্দকার মোশাররফ জমানার হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার হিসেবে। এই অমিয় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলা মামলার অন্যতম আসামি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা