দূষণে নিরুপায় নগরবাসী
বারবার রেকর্ড ভাঙছে ঢাকা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দূষণে বারবার রেকর্ড ভাঙছে ঢাকা। ফলে মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণে এখন নিরুপায় নগরবাসী। গতকালও বিশ্বের দূষিত ১০ শহরের মধ্যে ঢাকা ছিল শীর্ষে। আইকিউএয়ারের তালিকায় ঢাকার পর ছিল মিসরের রাজধানী কায়রো। এরপর ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের করাচি, কাজাখস্তানের আসতানা, কঙ্গোর কিনশাসা, ভারতের কলকাতা, উগান্ডার কামপালা, চীনের উহান এবং সর্বশেষ অবস্থানে ছিল ভারতের রাজধানী দিল্লির। গতকাল দুপুরে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকার দূষণ মাত্রা ছিল ২১০।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার সড়কে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করে। সাথে শিল্পকারখানার দূষণ মিলে ঢাকার বাতাসকে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে। বর্তমানে বায়ুদূষণের যে অবস্থা, তা থেকে রক্ষা পেতে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে আইকিউএয়ার। এছাড়া খোলা স্থানে ব্যায়াম না করা এবং ঘরের জানালা বন্ধ রাখতেও বলা হয়েছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদফতরসহ সরকারের সংস্থাগুলো বলছে তারা কাজ করলেও নাগরিক অসহযোগিতায় তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ আইনের মধ্যে থেকে শাস্তিসহ যতটুকু করা যায় তার সব করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শাস্তিও বাদ যাচ্ছে না। কিন্তু তাতেও মানুষের টনক নড়ছে না। দূষণের উৎস বন্ধে তাদের নীরবতা ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। ফলে প্রয়োজনে আরো কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করে তার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ঢাকা ছাড়াও দূষণের শীর্ষ দশে ছিল আরো ৯টি দেশ। এর মধ্যে ঢাকার পরই গতকাল দ্বিতীয় ছিল মিসরের রাজধানী কায়রো। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ১৯৯। এতে বলা হয়, ঢাকার মতো কায়রোর সড়কেও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করে। নগরে বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ৩৩ শতাংশ ভূমিকাও এই যানবাহনের। সেখানে সড়কে চলাচল করা ৮০ শতাংশ গাড়ি ও ট্যাক্সি পুরনো। এ ছাড়া কৃষিজমিতে ন্যাড়া পোড়ানোর কারণে ২০ শতাংশ এবং ১৭ শতাংশ দূষণের জন্য দায়ী শিল্পকারখানা।
দূষিত বাতাসের তালিকায় ৩ নম্বরে ছিল ইরাকের রাজধানী বাগদাদ। যার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ১৯৬। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ তারা নিয়মিত রাজধানীর বাতাসে সালফারের কড়া গন্ধ অনুভব করছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বিশেষ করে সালফার গ্যাসের উপস্থিতির কারণে বাগদাদের বাতাস এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে সেখানে শিশু ও বয়স্কদের ঘরের ভেতরে থাকা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
১৮০ একিউআই নিয়ে চতুর্থ দূষিত শহর ছিল পাকিস্তানের করাচি। আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী, করাচির বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে সড়কে অতিরিক্ত যানবাহন, ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো ধোঁয়া ও কলকারখানার দূষণ।
কাজাখস্তানের রাজধানী আসতানায় ছিল পঞ্চম স্থানে। সেখানে বায়ুদূষণের একটি বড় কারণ সড়কে অতিরিক্ত যানবাহন। নগরের সড়কে যানবাহন কমিয়ে আনতে দেশটির সরকার এ বছরের মাঝামাঝি গাড়ি আমদানির ওপর বড় ধরনের শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই শুল্কারোপ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কতটা কাজে দেবে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। সমালোচকরা বলেছেন, এতে সড়কে পুরনো গাড়ি চলা বেড়ে যাবে। নতুন গাড়ির চেয়ে পুরনো গাড়িতে দূষণ বেশি হয়।
দ্রুত নগরায়ন এবং অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো আফ্রিকার দেশ কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসার বায়ুদূষণে বড় অবদান রাখে। ফলে গতকাল ষষ্ঠ স্থানে ছিল কিনশাসার। যার একিউআই ছিল ১৭২।
কলকাতা ছিল সপ্তম স্থানে। যার বাতাসে একিউআই ছিল ১৬৮। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, শুষ্ক মৌসুমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার বাতাস বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বেশি দূষিত হয়ে পড়ে। এ জন্য রাজ্যের ভেতরের কিছু কারণ ছাড়াও রাজ্যের বাইরের কিছু কারণকে দায়ী করা হয়। ভেতরের কারণ হিসেবে যানবাহন, কলকারখানা ও নির্মাণ ক্ষেত্রের দূষণকে দায়ী করা হয়।
তালিকার ৮ নম্বর ছিল আফ্রিকার দেশ উগান্ডার রাজধানী কামপালা। যার একিউআই স্কোর ছিল ১৬২। একিউআই স্কোর ১৫৯ নিয়ে তালিকায় ৯ নম্বরে ছিল চীনের মধ্যাঞ্চলের নগর উহান। শুধু উহান নয়; বেইজিং, তিয়ানজিন, হেবেই, নানজিংসহ প্রায় অর্ধেক চীন ধোঁয়াশায় ঢেকে ছিল। আর সবশেষ ভারতের রাজধানী দিল্লি ছিল তালিকায় ১০ নম্বরে। একিউআই এ এর স্কোর ছিল ১৫৪।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা