ধলেশ্বরী নদীর মোল্লারহাট ফেরিঘাট অবৈধ দখলদারের নিয়ন্ত্রণে
- রাকিব হোসেন
- ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩১
সন্ত্রাসের জনপদ ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ বেষ্টিত ধলেশ্বরী নদীর কেরানীগঞ্জের মোল্লার হাট ও মধ্যের চরে যাতায়াতের ফেরিঘাট অবৈধ দখলদারের নিয়ন্ত্রণে। প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ চলাচল করে। দখলদারদের আয় প্রতিদিন ৫ টাকা করে ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। যা মাসে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা এবং বছরে অর্ধ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জ জেলার সাথে ঢাকার সাথে সড়কপথে সরাসরি বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রী পরিবহনের গাড়ি থাকলেও দ্রুত ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, সিরাজদিখান ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সাধারণ মানুষ, সবজি চাষি ও ব্যবসায়ীরা মোল্লার বাজার ফেরি ব্যবহার করে থাকেন। এতে তারা মুন্সীগঞ্জ থেকে এক ঘণ্টারও কম সময়ে ঢাকায় আসতে পারেন।
সাধারণ মানুষের ও ব্যবসায়ীদের দ্রুত ঢাকায় যাতায়াতের জন্য বিগত সরকার ধলেশ্বরী নদীর মোল্লার হাট ও মধ্যের চর, সিরাজদি খানের সাথে রাজধানী ঢাকার সাথে যাতায়াতের জন্য সরাসরি ধলেশ্বরী নদীতে সেতু স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী কাজ ও শুরু হয়েছিল। নদীর দুই পারে পিলার স্থাপনের পর কাজ আর বেশিদূর আগায়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপু ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদের নির্দেশে বিনা টেন্ডারে দখল হয়ে যায় ধলেশ্বরী নদীর মোল্লারহাট ফেরিঘাট। বন্ধ করে দেয়া হয় মোল্লারহাট মধ্যেরচর ধলেশ্বরী নদীর সেতুর কাজ। যে কারণে মোল্লার হাটে ধলেশ্বরী সেতুর কাজ গত ৮ বছরেও শেষ হয়নি। সেতুর কাজ বন্ধ করে ফেরিঘাট অবৈধ দখলের মাধ্যমে কয়েকজন নেতা প্রতি বছর ঘাট থেকে সাধারণ মানুষের ফেরি পারাপারের অর্ধ কোটি টাকা লোপাট করেছেন। বিনা টেন্ডারে ফেরি পারাপারের কারণে সরকার এই ফেরিঘাট থেকে প্রতি বছর অর্ধকোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট২০২৪ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আরেকটি রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীরা মোল্লারহাট ফেরিঘাট দখল করে নেয়। স্থানীয়রা জানান, ওই রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে আকতার হোসেন, নূর হোসেন নুরু ও পাভেল মোল্লার নেতৃত্বে মোল্লারহাট ফেরিঘাট ও মোল্লা বাজার এবং মোল্লা বাজার টেম্পোস্ট্যান্ড দখলে নেয়। যেখান থেকে তাদের প্রতিদিন অবৈধ আয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এই টাকার একটি অংশ পেয়ে থাকেন একটি রাজনৈতিক দলের ঢাকা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।
গতকাল মোল্লারহাট গিয়ে দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীর কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের দুই প্রান্তে সেতুর পিলার দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়রা জানান সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে গত ৮ বছর ধরে। সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছিলেন মৌসুমি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাদেরও অফিস বন্ধ দেখা গেছে। অফিসের সাইনবোর্ডে দেয়া মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে। ফেরি ঘাটে চলাচল করতে দেখা যায় স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি ফেরি। প্রতি ১০ মিনিট পরপর ফেরিটি দুই পারে চলাচল করে। ১০-১২টি মোটরসাইকেলসহ এক সাথে ৫০-৬০ জন লোক নিয়ে ফেরিটি পারাপারের কাজ করছে। ফেরিতে ওঠার আগে একটি টোলঘর রয়েছে। এই টোল ঘরে বসে আছেন সাতজনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনী সদস্যরা যাত্রীদের কাছ থেকে ফেরি পারাপারের আজে ৫ টাকা এবং প্রতিটি মোটরসাইকেলের জন্য ২০ টাকা করে আদায় করছে। জানা যায়, চাঁদা আদায়কারীরা সবাই আক্তার হোসেন, নূর হোসেন ও পাবেল মোল্লার লোক ।
এ ব্যাপারে দখলদার আক্তার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, মোল্লাহাট ফেরিঘাট বৈধভাবে ইজারা নেয়ার জন্য তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেছেন। আর নূর হোসেন জানান, তিনিও আবেদন করেছিলেন, তবে উপরের নির্দেশে তিনি আবেদন তুলে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রীনাত ফৌজিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্ত্রণালয় মিটিংয়ে থাকার কারণে ফোন রিসিভ করতে পারেননি মর্মে মোবাইলে মেসেজ দিয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা