চসিক না নওফেল, কার হাতে থাকবে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ?
- চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
প্রায় দুই যুগ আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ২০১৫ সালে নগর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আইনি জটিলতার ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ হারায় চসিক। বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিকানা নিয়ে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়ায়, এভাবে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠে।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর চসিক আবারো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা ফিরে পেতে উদ্যোগী হয়েছে। চসিক থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে, যার মাধ্যমে মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিকানার বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মতামত চেয়েছে। তবে এখনো ইউজিসি থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
২০০১ সালে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে সিটি করপোরেশনের ৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়। প্রতিষ্ঠাকালে পদাধিকারবলে তৎকালীন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। একই বছরের জুলাই মাসে ইউজিসি থেকে একটি চিঠি চসিকের মেয়র নাছির উদ্দীনের কাছে পাঠানো হয়, যেখানে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি পূরণ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়। এই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মহিউদ্দিন চৌধুরী হাইকোর্টে একটি রিট করেন।
এরপর আদালতের মাধ্যমে চিঠির বৈধতা বাতিল হলে রিট খারিজ হয়ে যায়। আদালত থেকে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী মহিউদ্দিনের আবেদন দেওয়ানি আদালতে নিয়ে যেতে বলা হয়। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরী পরে লিভ টু আপিল করলেও ব্যক্তিগতভাবে শুনানিতে উপস্থিত না থাকায় সেটি খারিজ হয়ে যায়। ফলে আইনিভাবে চসিকের পক্ষেই আদালতের সিদ্ধান্ত থাকলেও কার্যত মালিকানার বিষয়টি অমিমাংসিত রয়ে যায়।
যদিও আদালতের রায় চসিকের পক্ষে, কিন্তু এখনো কার্যত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড নওফেল পরিবারের অধীনেই রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ১১ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে এবং পতিত স্বৈরাচার সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বোর্ডে আরো সদস্য হিসেবে আছেন নওফেলের মা হাসিনা মহিউদ্দিন ও তার ছোট ভাই বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন। এই বোর্ডে আরো আছেন বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়াসহ আরো কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।
গত সেপ্টেম্বর মাসে মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে নওফেলের নামে দেয়া একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী তার ব্যক্তিগত অর্থ এবং দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা নিয়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে স্থায়ী আমানত হিসেবে পাঁচ কোটি টাকা জমা করেন এবং সেই অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পান। এতে সিটি করপোরেশনের কোনো আর্থিক অনুদান ছিল না।’
এ দিকে চসিকের দাবি, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে চসিকের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এটি চট্টগ্রামের জনগণের অধিকারভুক্ত সম্পদ। বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিকানা এবং সুষ্ঠু পরিচালনার লক্ষ্যে গত ৫ সেপ্টেম্বর চসিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় দখলমুক্ত করতে চসিকের নেতৃত্বে ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন চাওয়া হয়।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। আদালতেও বিষয়টি মীমাংসিত হয়েছে এবং আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।’
চসিকের নতুন মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি চট্টগ্রামের জনগণের সম্পদ এবং এখন এটি বেদখল হয়ে গেছে। আমাদের লক্ষ্য হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়টি জনগণের হাতে ফিরিয়ে আনা।’
এ দিকে প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ের মালিকানা নিজেদের দখলে রাখতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের যে অব্যাহত অপচেষ্টা তা নিয়ে শে^তপত্র প্রচারের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা সবাই জানি মহিউদ্দিন সাহেব মেয়র থাকাকালে এ বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একজন ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি থাকাকালে যা করেন তা কখনো ব্যক্তিগত কাজ হতে পারে না। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, চট্টগ্রামে তো আরো অনেক প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় আছে, সেগুলোর মালিকানা তো সিটি কর্পোরেশন দাবি করছে না। প্রিমিয়িার চসিকের বলেই চসিক তার মালিকানা দাবি করছে। এ ছাড়া বিশ^বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় সিটি করপোরেশনের জমিতেই এবং তা অত্যন্ত প্রাইম লোকেশনে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা