পবিপ্রবিতে রাতভর র্যাগিং হাসপাতালে ৩ শিক্ষার্থী, বহিষ্কার ৭
- পবিপ্রবি প্রতিনিধি
- ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
র্যাগিংয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বনের ঘোষণা দিলেও রাতভর র্যাগিংয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) তিন শিক্ষার্থীকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে সাত শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত হিসেবে শনাক্ত করে তাদের হলো থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত শনিবার রাত আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এম কেরামত আলী হলে এ ঘটনা ঘটে। এম কেরামত আলী হলে অবস্থানরত স্নাতক প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪ সেশন) সব শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের শিকার হন।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. কেরামত আলী হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগ দেয়া হয়। র্যাগিং চলাকালীন হঠাৎ করেই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিন শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই অমানবিক নির্যাতন এর কারণে অনেকেই রাতে ঘুমাতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০২৩-২৪ সেশনের এক শিক্ষার্থী জানান, আনুমানিক রাত ১২টায় ইমিডিয়েট সিনিয়ররা আমাদের গণরুমে এসে আমাদের সবার ফোন জমা নিয়ে একটা টেবিলে রেখে দেন। আমাদেরকে কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করে, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে, বিভিন্ন বাধ্যতামূলক নিয়ম বলে, সিগারেটের ধোঁয়ায় অসস্থিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে গণরুমে। এ ছাড়াও আমাদের জানালায় ঝুলানো থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।
এ পরিস্থিতির খবর পেয়ে এম কেরামত আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ডা: আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সহকারী প্রক্টর মো: আবদুর রহিম ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং গণরুমে ঢুকে র্যাগিং দেয়ার সাথে যুক্ত দুইজনকে কম্বল মুড়ি দিয়ে থাকা অবস্থায় হাতেনাতে ধরেন এবং ক্যান্টিনে গিয়ে চারজনকে র্যাগিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত পবিপ্রবি প্রশাসন থেকে পাওয়া বক্তব্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ সেশনের সাত শিক্ষার্থী এ কাজে জড়িত বলে নিশ্চিত করেছেন।
পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনজন অসুস্থ শিক্ষার্থীর অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় রাতেই তাদেরকে পবিপ্রবির হেলথ কেয়ারের ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বলেন এবং রাতেই পবিপ্রবির অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই অসুস্থ শিক্ষার্থীদের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, “র্যাগিং বন্ধের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি ব্যর্থ? তারা কি শুধু বলার জন্যই বলে যাচ্ছেন, প্রভাব বিস্তারে তারা কি অপারগ বা তারা শুধু বলেই যাবেন আর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই র্যাগিং নামক ভয়াবহ মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়েই চলবে?”
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আবুল বাশার খান বলেন, “এ পরিস্থিতি একেবারেই কাম্য নয়। এ ঘটনার সাথে যে বা যারা যুক্ত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি এমন পরিস্থিতি যেন পরবর্তীতে আর না ঘটে এ জন্য পবিপ্রবি প্রশাসন আরো অধিক তৎপর হবে এবং এ জন্য সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।”
ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম গতকাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সরজমিন গিয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিয়ে সর্বোচ্চ সুচিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “আমরা অভিযুক্ত সাত শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের দায়ে আজই হল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। বিষয়টি নিয়ে ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সাথে সভা হয়েছে। তাদের সুপারিশক্রমে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদেরকে অ্যাকাডেমিকসহ অধিকতর শাস্তির আওতায় আনা হবে”।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা