ছাত্রদের সাথে নিয়ে পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম গড়তে চান মেয়র ডা: শাহাদাত
- চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ছাত্রদের সাথে নিয়েই চট্টগ্রামকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি সিটি হিসেবে গড়তে চান সিটি মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন। বৃহস্পতিবার নগরীর আন্দরকিল্লা কদম মোবারক সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ ও কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র চট্টগ্রামের উন্নয়নে ছাত্রদের সহায়তা চান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চসিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা আক্তার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টিংকু কুমার ভৌমিক, আলাউদ্দিন আল নুর, এম. এ. হালিম বাবুল, সাজ্জাদ শরীফ, ইমরান জুয়েলসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, আমি চট্টগ্রামবাসীকে একটা সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, গ্রিন, হেলদি সিটি উপহার দিতে চাই। কিন্তু এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ যুদ্ধে আমি চাই আমার ছাত্র ভাইয়েরা আমার সাথে থাকবে। আমি ছাত্রদের প্রশংসা করছি। গত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা ট্রাফিক বিভাগের কাজ করেছে। ছাত্ররা স্বৈরাচারী সরকার পতনের জন্য রাস্তায় যুদ্ধ করেছে। এ চট্টগ্রাম শহরকে সুন্দর করার জন্য প্রয়োজনে ছাত্রদেরকে আরেকবার প্রস্তুত হতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমি আশা করছি ছাত্রদেরকে নিয়ে আমি একটি ক্লিন, গ্রিন, হেলদি সিটি চট্টগ্রামবাসীকে উপহার দিব।
নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে মেয়র শাহাদাত বলেন, জ্ঞান অন্বেষণ করো। জ্ঞানের জন্য কোনো বয়স নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের শিখতে হবে। মানে পুরা জীবনেই আমাদের জ্ঞান অন্বেষণের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। পুরা জীবনটাই আমাদের একটা সংগ্রাম। তবে এর মধ্যে যে জিনিসটি দরকার সেটি হচ্ছে ‘নৈতিক’ শিক্ষা। আমি একজন ডাক্তার হয়ে যখন একজন গরিব রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার মনোবৃত্তি থাকবে না, তখন আমার এ শিক্ষার কোনো দাম থাকবে না। ওটা কোনো আলোকিত শিক্ষা নয়। আলোকিত শিক্ষা হচ্ছে সেটা, যখন আমি ডাক্তার হয়ে একজন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিলাম, তাকে কিছু ওষুধ দিলাম, সেটাই হলো আলোকিত শিক্ষা এবং এ শিক্ষাটাই আমাদের দরকার। শিক্ষার্থীদের শুধু এটুকুই বলব, সবাইকে এ ধরনের আলোকিত ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাহলেই আমরা একদিন দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে পারব।
পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ছ্ত্রাদের প্রশিক্ষণ দিতে শিক্ষকদের ভূমিকা প্রত্যাশা করে মেয়র বলেন, আমি যেটার ওপর জোর দিব সেটা হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। আপনারা ছাত্রদেরকে শিখাতে পারেন সবাইকে একটা চকলেট দিয়ে, চকলেটের কাভারটা তারা কোথায় ফেলছে তা পর্যবেক্ষণ করলেন। কাভারটা সে নিচে ফেলল না ডাস্টবিনে ফেলল। যারা ডাস্টবিনে ফেলেছে তাদেরকে একটা শ্রেণী। আর যারা ডাস্টবিনে ফেলল না তাদেরকে আরেকটা শ্রেণী রাখবেন। যারা ডাস্টবিনের বাইরে ফেলছে তাদের শিক্ষা দিতে হবে যেন সে পরবর্তীতে সেটা আর ডাস্টবিনের বাইরে না ফেলে। কারণ তারা স্কুল থেকে এ শিক্ষা নিবে। স্কুল এমন একটি জায়গা যেটার প্রতিচ্ছবি বা রিফলেকশন স্থায়ী।
নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে দোকানগুলোতে বিন রাখা বাধ্যতামূলক করা হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, আমি অনতিবিলম্বে চট্টগ্রামের যতটি দোকান আছে যতটি প্রতিষ্ঠান আছে তারা ময়লার বিন বাধ্যতামূলকভাবে রাখছে কি না তা দেখব। আমি অলরেডি বিন কালেকশন করছি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। ময়লা যাতে তারা যেখানে সেখানে না ফেলে। ফেললে তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।
অনুষ্ঠানের পর মেয়র স্কুল প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন এবং স্কুলের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবগত হয়ে সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন।
কাজের মান ঠিক না থাকলে ঠিকাদারের বিল দেয়া হবে না : চট্টগ্রাম নগরীতে চলমান এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিল না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন। এ ছাড়া প্রকল্পের কাজে কেউ অবৈধ লেন-দেন করলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন মেয়র।
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে গত বুধবার দুপুরে নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সাথে বৈঠকে এ মন্তব্য করেন মেয়র। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো: আশরাফুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের পিডি মো: আনিসুর রহমানসহ প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারবৃন্দ।
বৈঠকে মেয়র বলেন, এ শহর আমার আপনার সবার। এখানকার রাস্তা দিয়ে আমার পরে আমার ছেলে-মেয়েরা হাঁটবে, আত্মীয়স্বজন হাঁটবে, নেক্সট জেনারেশন এ পথ দিয়ে হাঁটবে। তাই কাজের কোয়ালিটি শতভাগ ঠিক রাখতে হবে। এমনভাবে রাস্তাটা করতে হবে যাতে বছরের পর বছর একটা উদাহরণ হিসেবে সবাই বলতে পারে যে, এ রাস্তাটা অমুক প্রতিষ্ঠান করেছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, ইমিডিয়েটলি সমস্ত প্রকল্প ভিজিট করে রাস্তার মালামাল ও কোয়ালিটি টেস্ট করে জানাবেন। আমি বলছি আপনারা যারা যারা ভালো কাজ করেছেন তাদের বিল দিয়ে দেয়া হবে। আর যারা খারাপ কাজ করবে তাদের পানিশমেন্টের আওতায় আনা হবে। এখানে আমি কোনো ছাড় দিতে রাজি না। জনগণের টাকা নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে তাদেরকে কিন্তু আমরা পানিশমেন্টের আওতায় আনব। আজ থেকে কাজ শুরু করেন, কাজ বন্ধ রাখবেন না।
নগরীর প্রয়োজনীয় স্থানগুলোতে ফুটওভার ব্রিজ হচ্ছে না অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আপনারা ফুটওভার ব্রিজের কথা বলছেন। ফুটওভার ব্রিজের বাস্তবতা নিরীক্ষা করে ১৭টা ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে দেয়া হবে এবং সব কাজ দ্রুত শেষ করে আমি কিছু দৃশ্যমান রেজাল্ট জনগণকে দেখাতে চাই।
বৈঠকে ঠিকাদাররা কাজ করার ক্ষেত্রে পূর্বের কাউন্সিলররা ঘুষ নিতেন এবং ঘুষ না দিলে মেয়র-কাউন্সিলর মিলে কাজে বাধা সৃষ্টি করতেন বলে অভিযোগ করেন। ঠিকাদাররা দ্রুত বকেয়া বিল প্রদানের দাবি জানান এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় পূর্বে যেসব ঠিকাদার কাজ করতে পারেননি বা কাজ করলেও বিল ঠিকমতো পাননি তাদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তারা।
নিজের ব্যানার নিজেই ছিঁড়লেন মেয়র শাহাদাত : এদিকে নগরীর সৌন্দর্যহানি করে এমন ব্যানার, ফেস্টুন, স্টিকারের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে নিজের ব্যানার নিজেই ছিঁড়েছেন সিটি মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন। বুধবার বিকেলে নগর ভবনের সম্মুখ থেকে মেয়রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টানানো ব্যানার ও পোস্টার নিজ হাতে খুলেন তিনি। এ সময় সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমীকে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে সড়ক, অলিগলিতে যত ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন রয়েছে তা দ্রুততার সাথে অপসারণ করার নির্দেশনা দেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা