অতি দ্রুত নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে নির্বাচন দিন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৫
অতি দ্রুত নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য আন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ, আইনবিদ, শিক্ষক ও বিশিষ্টজনরা। এ পর্যন্ত যতটুকু সংস্কার হয়েছে তার ভিত্তিতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করাও দাবি জানান তারা। গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শামসুল হক চৌধুরী হলে এসসিবিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটি আয়োজিত ‘জুলাই ৩৬ গণ বিপ্লবের আকাক্সক্ষা : রাষ্ট্র মেরামত ও নির্বাচন-সঙ্কট এবং সম্ভাবনা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
এসসিবিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শাহ আহমেদ বাদলের সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুবের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুনী, সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী মোহসিন রশিদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, প্রবীণ আইনজীবী আলহাজ গিয়াস উদ্দিন, কমরেড সাইফুল হক, এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান, ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, ড. রফিকুল ইসলাম মেহেদী প্রমুখ।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করা। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। এখন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে আমরা সবাই। এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। এ পর্যন্ত যতটুকু সংস্কার হয়েছে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে। দেশকে আইনের শাসনের দিকে নিতে হবে। তা হলে দেশ গণতন্ত্রের দিকে যাবে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ১১০ দিনে কি সংস্কার করেছেন? যতক্ষণ না গুণগত কোনো পরিবর্তন হচ্ছে, এটা কোনো সংস্কার নয়। এই পুলিশ দিয়ে কি ভোট করবেন? সংস্কার মানে গঠনমূলক পরিবর্তন। তিনি বলেন, মিনিমাম ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার করেন। রাজনীতিবিদদের সাথে কথা বলেন। আমি সংস্কারের পক্ষে, ভোট বিলম্বের পক্ষে নই। সুব্রত চৌধুরী বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এই সরকার আর ১০০ দিন টিকতে পারবে না। তিনি বলেন, সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করলে জনগণ মাঠে নামবে। মহসিন রশিদ বলেন, আইনের শাসন হল গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। আর আইনের শাসনের জন্য শক্তিশালী বিচার বিভাগ দরকার। তিনি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের আইনের শাসনের দিকে যেতে হবে। সেটা হলে দেশ গণতন্ত্রের দিকে যাবে।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দ্রুত নির্বাচন করলে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতি স্মরণ করবে। তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। অতিদ্রুত নির্বাচন কমিশন সংস্কার করুন। যারা গণহত্যা করেছে তাদের বিচার করুন।
লিখিত বক্তব্যে এসসিবিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, শুধু নির্বাচন নয় রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্নির্মাণ করতে হবে। যাতে যে কোন নির্বাচিত সরকার স্বৈরাচারী বা ফ্যাসিবাদী সরকারে রূপান্তরিত হতে না পারে। তার জন্য সংস্কার বা পুনর্গঠন আজ সময়ের দাবি। বাংলাদেশের জনগণ ’৭১-৭২, ’৯০-৯১ এর মতো সফল যুদ্ধ/আন্দোলন শেষে স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণায় বিদ্ধ হতে চায় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সাধারণ প্রত্যাশা পাঁচ বছর পরপর অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার সেবক নির্বাচিত করতে পারবে, আইনের শাসন থাকবে, শাসকের আইন নয়। সরকারদলীয় লোকজন রাষ্ট্র সম্পদ লুণ্ঠন করবে না, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হবে না। প্রত্যেকে যার যার মর্যাদা নিয়ে এই প্রিয় মাতৃভূমিতে বসবাস করবে। কিন্তু গত ৫৩ বছরে জনগণের এই ন্যূনতম প্রত্যাশাগুলো পূরণ তো হয়নি। ফ্যাসিস্টদের ছবি সরালেই ফ্যাসিবাদের বিদায় হয় না।