দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিরক্ষা কাজ শুরু ডিসেম্বরেই
ব্যয় হবে ১১৭০ কোটি টাকা- এস এম রহমান পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
- ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিরক্ষা কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে গৃহীত টেকসই প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরেই। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১১৭০ কোটি টাকা। আর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আরো সুরক্ষিত হবে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাগর উপকূল ও নদীর তীর। গৃহীত প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যে রয়েছে আনোয়ারা উপজেলার সাগর উপকূল ও নদীর তীর টেকসই প্রতিরক্ষা কাজ। এতে ব্যয় হবে ৩৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর প্যাকেজ ৮টি। বাঁশখালীর সাগর উপকূল ও নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যয় হবে ৫০৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, প্যাকেজ ১৫টি। বোয়ালখালীতে নদীর তীর সংরক্ষণে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ৯ লাখ টাকা, প্যাকেজ সংখ্যা ১০টি।
অপর দিকে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায় চলমান কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রকল্প ব্যয়ের সাশ্রয় হওয়া ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চন্দনাইশে ৮ প্যাকেজে ২.০৭ কিলোমিটার ভাঙন প্রতিরোধ কাজ শুরু হচ্ছে। কাজের মধ্যে শঙ্খ নদীর দক্ষিণ ব্রাহ্মণডাঙ্গা ৭০০ মিটার, শ্যাম মুহরিঘাট ২০০ মিটার, দ্বীপপাড়া ৭০ মিটার, ডেবারকূল ২০০ মিটার, বৈলতলী রশিদিয়া মাদরাসা ৩০০ মিটার, চরবড়মা ৩০০ মিটার, পুরানগর মসজিদ ১৫০ মিটার এবং বাংলাবাজার (দক্ষিণ চরতি) ১৫০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হচ্ছে আগামী মাসেই।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছিল সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রাম। এতে হাজার হাজার বসতবাড়ি বিধ্বস্ত ও প্রায় অর্ধলাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এ ছাড়া শত শত কিলোমিটার রাস্তাঘাট সড়ক সেতু কালভার্ট বিনষ্ট হয়, হাজার হাজার একর ফসলের জমি নদী ও সাগরে বিলীন হয়। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন সময়ে নদী ও সাগর উপকূল প্রতিরক্ষা ও শত শত কিলোমিটার বেড়িবাধ নির্মাণ করে। পরবর্তীতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী উপজেলার বিস্তীর্ণ নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সাগর উপকূল সুরক্ষায় প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রটেক্টিভ ওয়ার্ক ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। এতে সাগর ও নদীর বেশির ভাগ এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় কয়েক লাখ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড অবশিষ্ট অরক্ষিত অংশ সুরক্ষায় বাঁশখালী, আনোয়ারা এবং পটিয়া বোয়ালখালী উপজেলার ভাঙন প্রতিরোধে পৃথক প্রকল্প প্রণয়ন করে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে পটিয়ায় ভূমি অধিকরণসহ প্রায় সাড়ে ১১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিষ্কাশন ও সেচ উন্নয়ন প্রকল্প কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে।
অপর দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড চলমান কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলার অবশিষ্ট অরক্ষিত অংশ সুরক্ষায় ৮৭৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, বোয়ালখালী উপজেলার চলমান কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে বোয়ালখালী সুরক্ষায় ১৩৪ কোটি ৯ লাখ টাকাসহ মোট ১ হাজার ৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পৃথক প্রকল্প প্রণয়ন করেন, যা পরবর্তীতে একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়।
প্রণয়নকৃত প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী, আনোয়ারা টেকসই সুরক্ষা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পোল্ডার নম্বর ৬৪/১এ ৩.৬১০ কিলোমিটার ৬৪/১সি ২.৮০০ কিলোমিটার ও ৬৩/১এ ৫.১৭৫ কিলোমিটারের ঢাল পুনরাকৃতিকরণ ও সংরক্ষণ কাজ এবং পোল্ডার নম্বর ৬৪/১এ ১.১০০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ রয়েছে। অপর দিকে বোয়ালখালী সুরক্ষায় ১০ প্যাকেজে ৬.৫১৫ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ রয়েছে। বর্তমানে চলমান কাজের মধ্যে আনোয়ারা উপকূল থেকে নগরীর পতেঙ্গা পর্যন্ত সুরক্ষায় ৫৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারা পার্কি সমুদ্র সৈকত ও রায়পুর ইউনিয়ন সুরক্ষার কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। অপর দিকে বাঁশখালী উপজেলা সুরক্ষায় ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার টাকায় ৩৬ প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ওই দুই উপজেলার সমাপ্ত কাজ ও চলমান কাজের সাথে সংগতি রেখে নদী ও সাগর উপকূল ও তীর এবং অভ্যন্তরীণ খাল ও নদীর ভাঙন ঠেকাতে (আনোয়ারার রায়পুর ও জুইদন্ডির অংশসহ) নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করা হয় বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির আহমেদ সাইফ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাঈদ জানান, বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলার নদী ও সাগর তীর সুরক্ষায় গৃহীত প্রকল্পের কাজ খুব দ্রুত শুরু হচ্ছে।
অপর দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙ্গামাটি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা জানান, চলমান কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে বোয়ালখালী উপজেলা সুরক্ষা কাজও শিগগিরই শুরু হচ্ছে। তিনি জানান, গৃহীত প্রকল্পের ১০টি প্যাকেজের দরপত্র সম্পন্নের কাজ-প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরেই কাজ শুরু হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন। একইভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন একের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাঈদ জানান, বর্তমান কাজের দরপত্র প্রণাম এর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই চলমান কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে গৃহীত প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা