সন্ত্রাসের সাথে ইয়াবা কারাবারে জড়িয়েছে রোহিঙ্গারা
- হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)
- ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মাদক কিংবা মানবপাচার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিত্য ঘটনা। আধিপত্য বিস্তার এবং নিজেদের অবস্থান সংহত করতে প্রায়ই ক্যাম্পে অস্ত্রের মহড়া কিংবা রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। মাঝেমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানের মুখে কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও থামানো যাচ্ছে না ক্যাম্পের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অপরাধ তৎপরতা। ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন কোনো না কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ড, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অস্ত্র উদ্ধার, ইয়াবা ব্যবসা, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ও অনিয়মতান্ত্রিক কাজে রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অগ্নিসংযোগসহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা করছে। ক্যাম্পের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অপরাধী চক্র। তাদের কর্মকাণ্ডে ভীত স্থানীয় লোকজন ও সাধারণ রোহিঙ্গারা। ১৪ ও ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি রোহিঙ্গা ডাকাতরা এখন ইয়াবার গডফাদার। তারা মূলত ইয়াবার চালান খালাস করতেই ডাকাতের রূপ ধারণ করেছে এবং বিভিন্ন সময় অপহরণ করেও মুক্তিপণ আদায় করছে। স্থানীয় শামসুল আলম বলেন, ডাকাতরা স্থানীয়দের চিঠির মাধ্যমে খবর দেয় যে জাদিমুড়া এলাকায় ডাকাতি হবে। এমন বার্তায় আতঙ্কে রাত কাটাতে হয়েছে স্থানীয়দের। এখন পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক বা শান্ত মনে হলেও কখন কি যে হয়ে যায় তা বলা মুশকিল। টেকনাফের জুবায়ের জানান, অনেক সময় স্থানীয় মেম্বার, গ্রামপুলিশ ও সাধারণ মানুষ রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিয়েছে রোহিঙ্গা ডাকাতের ভয়ে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মীদের দাবি, অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে যে সব সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে তারা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি ও খুনাখুনিতে জড়িয়ে পড়ে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, উখিয়া-টেকনাফের মানুষ ইয়াবা, সন্ত্রাস, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের থেকে বাঁচতে চায়। ক্যাম্পগুলোর ভেতরে ১৫ থেকে ২০টি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে উঠেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে মাদক ব্যবসাসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড।
উখিয়া থানার ওসি আরিফ হোসাইন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো। ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। মাদকসহ প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছেন। ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। আরসা কমাণ্ডারসহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকের পর ক্যাম্প এখন অনেকটা স্বাভাবিক বলে মনে করছেন উখিয়া থানা পুলিশ।
জাতিসঙ্ঘের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ১১ লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। এর আগে থেকেই বিভিন্ন সময় আরো বেশ কিছু রোহিঙ্গা এসে বাংলাদেশে বসবাস করে আসছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা