২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তামাকের কারণে দিনে ৪শর বেশি মানুষ মারা যায়

-

শুধু তামাক ব্যবহারজনিত কারণে একদিনে ৪০০ জনের বেশি এবং বছরে এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকালে প্রাণ হারায় এমন বাস্তবতাকে এড়িয়ে তামাক কোম্পানিগুলো শুধু মুনাফা অর্জনের জন্য আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা রাজস্ব হারানোর কথা বললেও ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক কোম্পানি বছরে যে পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করে তার থেকে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয় তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে। উল্লেখ্য, তামাকজনিত কারণে রোগের চিকিৎসা করতে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় এবং তামাক কোম্পানিগুলো থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করতে পারে ২২ হাজার কোটি টাকা।
‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও তামাক কর বৃদ্ধি : গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বীর সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।
বক্তারা বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোল এফসিটিসির আলোকে সংশোধন করা প্রয়োজন।
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, দুনিয়া বদলে গেছে। বিজ্ঞাপনের ভাষা ও কৌশলেও পরিবর্তন এসেছে। আমরা রয়ে গেছি পূরনো ধাঁচেই। সিনেমা হলে একদিকে ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ স্লোগান দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে নায়ক ধূমপান করছে, বিষয়টি সাংঘর্ষিক। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে স্যোশাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন বাড়াতে হবে। ফেসবুকে ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে প্রচারণা বাড়ালে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু তামাক কোম্পানি এবং তাদের পরিচালিত বিভিন্ন সংগঠন আইন সংশোধনের বিরোধিতা করছে। তাদের দাবি, আইন সংশোধন হলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হওয়ার পর পরবর্তী ২০০৫-০৬ এবং ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ১৭.৯৭ শতাংশ এবং ৩৭.৫২ শতাংশ। একইভাবে, ২০১৩ সালের সংশোধনীর পর পরবর্তী ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ২৫.৫১ শতাংশ এবং ৪৬.৫২ শতাংশ। সে কারণে মানুষের অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী এখনই অধ্যাদেশ আকারে জারি করার দাবি করেন তিনি। তাকে কর বাড়ালে তামাক কোম্পানির আরেকটি দাবি, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, বিষয়টি বাস্তবতা বিবর্জিত। কারণ কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শুধু সিগারেট বিক্রি করেন না। তারা দোকানে কমপক্ষে ৩৮টি পণ্য বিক্রি করেন। তাই একটি পণ্যের বিক্রি বন্ধ হলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং দেশে ক্ষতিকর এই পণ্যের ব্যবহার কমে আসবে। তাই অবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী এখনই অধ্যাদেশ আকারে জারি করা প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement