২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তীব্র জনবল সঙ্কটে সিডিএ

দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছেন চেয়ারম্যান
-

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা প্রতিষ্ঠানে তীব্র জনবল সঙ্কট বিরাজ করছে। অতীতে প্রতিষ্ঠানটিতে নিচের দিকে প্রচুর লোকবল নিয়োগ দেয়া হলেও কর্মকর্তা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে আন্তরিকতা ও প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নতুন নিয়োগ পাওয়া সিডিএ চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে প্রায় ৬০০ জনের মতো জনবল ঘাটতি থাকায় বর্তমান কর্মকর্তারা অতিরিক্ত কাজের চাপে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চরম উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-বিএইচআরএফ।
সংগঠনটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান, জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট এ.এইচ.এম জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সিডিএর মতো জনগুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা প্রতিষ্ঠানে অবিলম্বে জনবল সঙ্কট নিরসনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, আমাদের তথ্যানুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম অনুসারে ৬০০ জনের মতো জনবল ঘাটতি রয়েছে। কর্মরত জনশক্তি প্রায় ৩০০ জন।
বিবৃতিদাতারা বলেন, সিডিএ চেয়ারম্যানের অবস্থা হলো ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার’। তীব্র জনবল সঙ্কটে ভুগছে সিডিএ। বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, প্রধান বন্দরনগরী ও বাণিজ্যিক শহর হলেও সিডিএতে আছে মাত্র একজন আর্কিট্যাক্ট। দুটি অথরাইজড কমিটির একটিতে কোনো আর্কিট্যাক্ট নেই। বিবৃতিতে তারা প্রশ্ন রাখেন, আর্কিট্যাক্ট ছাড়া অথরাইজড কমিটি কিভাবে প্ল্যান অনুমোদন দেয়? ফলে প্ল্যান অনুমোদন অনেক সময় বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। পুরো শহরে প্ল্যান অনুযায়ী নির্মাণ কাজ হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য পর্যাপ্ত পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) নেই। মাত্র তিনজন পরিদর্শক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সিডিএ। ফলে চট্টগ্রাম মহানগরী হয়ে পড়েছে অপরিকল্পিত নগরী। এর প্রভাব নান্দনিক শহরটাকে বসবাসের অনুপযুক্ত করে তুলছে।
সিডিএতে অতীতে অনেক প্রভাবশালী ক্ষমতাবান দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু কেউ জনবল নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। লোকবল নিয়োগের চেয়ে প্রকল্প নেয়ার দিকেই বেশি ঝুঁকেছেন তারা। এসব প্রকল্পের ফিজিবিলিটি যাচাই করা হয়নি। ফলে নতুন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম নতুন প্রকল্পে হাত দেয়ার চেয়ে অসমাপ্ত প্রকল্প সমাপ্তের দিকে নজর দিয়েছেন। তিনি সিডিএকে আরো বেশি জনবান্ধব করতে চান।
গত ২২ বছরে সিডিএ থেকে ১২ জন স্থাপত্য প্রকৌশলী অবসর নিয়েছেন, বিপরীতে একজনও নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে একজনকে অনেকগুলো প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করতে হয়। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি মাত্র ৭ দিনে তৈরি করতে হয়। অথচ এটা তৈরি করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লাগে। সেনাবাহিনীকে প্রকল্পে যুক্ত করায় এটা কিছুটা সাফল্যের মুখ দেখলেও পুরো প্রকল্পের সুফল এখনো জনগণ পায়নি। সিডিএ এর প্ল্যানিং ইউনিটে চিফ টাউন প্ল্যানারের জায়গায় পরিকল্পনাবিদকে কাজ করতে দিতে হবে। প্ল্যানারের কাজ কখনো একজন আর্কিট্যাক্ট বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার করতে পারে না। যার কাজ তাকে দিয়েই করাতে হবে।
সিডিএতে ডিপিজে রয়েছে মাত্র ১২টি। তার মধ্যে টাউন প্ল্যানারের পোস্ট রয়েছে মাত্র ১১টি, যার মধ্যে কাজ করছে মাত্র ৭ জন। ১২টি ডিপিজেতে মাত্র ৭ জন দিয়ে কিভাবে একটি পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলবে? সেক্ষেত্রে অবশ্যই ১২টি ডিপিজেতে যদি মিনিমাম দুজন টাউন প্ল্যানার কাজ করার সুযোগ পান তবেই বাসযোগ্য ও টেকসই নিরাপদ আধুনিক নগরী গড়ে তোলা সম্ভব।


আরো সংবাদ



premium cement