১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পোশাক খাতে আ’লীগ সমর্থক ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্র থামছে না

অস্থিরতায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি

-

পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্যানুসারে, গার্মেন্ট খাতে অস্থিরতার কারণে আনুমানিক ৩০০-৪০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এখনো অস্থিরতার কারণে গার্মেন্ট খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটি নিরূপণ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে আমাদের কাছে আসা প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, যা আরো বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন সাম্প্রতিক সময়ে নির্দিষ্ট কিছু শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতার কারণে শুধু সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের প্রায় ২৫০-৩০০ মিলিয়ন ডলারের রফতানি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

দেশের গার্মেন্ট খাতে আবার অস্থিরতার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে পতিত সরকারের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা। এক দিকে গার্মেন্ট খাতে স্থিতিশীলতা আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। অপর দিকে এ খাতে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অশান্তি অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সমর্থক কারখানা মালিকেরাও ভূমিকা পালন করছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলতে চলমান অস্থিরতার মূল ভূমিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কারখানা মালিক ও প্রতিবেশি দেশের। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক অযৌক্তিক বিক্ষোভের কারণে দেড় শতাধিক পোশাক কারখানা এবং অন্তত চার লাখ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন অস্থিরতার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা শ্রমিকদের কিভাবে বেতন পরিশোধ করবে এ বিষয়ে কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ।

গাজীপুরের চান্দনা এলাকায় টি অ্যান্ড জেড অ্যাপারেল লিমিটেড নামে এক কারখানার শ্রমিকরা তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। গত শনিবার সকাল থেকে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের বকেয়া বেতন সরকার দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর গতকাল শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে।

শ্রমিক নেত্রী ও আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমান সরকার গার্মেন্ট খাতের অস্থিরতা দূর করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে পতিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত কিছু ব্যবসায়ীর কারণে এসব পদক্ষেপ কোনো কাজে আসছে না। এসব ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে বিতর্কিত করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, টি অ্যান্ড জেড অ্যাপারেল লিমিটেডের অস্থিরতা পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ সারা বছর ব্যবসা করলেও শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করছে না। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নানা অপকর্ম করে এখন বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন। তিনি দেশে নেই এমন যুক্তি দেখিয়ে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে না। এর আগে গত শনিবার থেকে টানা ৫৩ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিকরা। বেতন না পেলে মহাসড়ক না ছাড়ার ব্যাপারে অনঢ় অবস্থানের কথা জানান তারা। পরে এক মাসের বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে বেলা ২টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যান।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি ও পাওনা কিভাবে, কবে পরিশোধ করা হবে তা আলোচনার জন্য শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধিদলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সচিব। পর্যায়ক্রমে তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। এ সময় শ্রমিকদের মহাসড়ক ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন সচিব। শ্রমিকদের বলা হয়, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন, আমরা অপেক্ষায় আছি।

টানা তিন দিন মহাসড়ক অবরোধ থাকার ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে জানতে যোগাযোগ করা হয় বিজিএমইএর সাবেক একজন সহসভাপতি এবং বর্তমান দুই কর্মকর্তার সাথে। তারা কেউই পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। পরিচয় প্রকাশ করা হবে না নিশ্চয়তা দেয়ার পর তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে দৈনিক ১৩০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য বিদেশে রফতানি করা হয়। তার মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে প্রায় ৩০ ভাগ রফতানি পণ্য পরিবহন করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ মোট রফতানির প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য এই মহাসড়ক দিয়ে পরিবহন করা হয়।

গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া অবরোধের ফলে মহাসড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে বিকল্প উপায়ে রফতানি পণ্য গন্তব্যে পৌঁছতে হয়েছে রফতানিকারকদের। এতে সময় ও খরচ উভয়ই বেশি লেগেছে। তারপরও ধারণা করা হচ্ছে, দৈনিক মোট রফতানির চার ভাগের এক ভাগ বিঘিœত হয়েছে। অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই হিসাবে গত তিন দিনে রফতানি বিঘিœত হয়েছে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের। এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক শিল্প মালিক বলেন, এই অবরোধের কারণে আশপাশের গড়ে ১৫ থেকে ২০টি কারখানা ছুটি দিতে হয়েছে। এখনো শিল্প মালিকদের বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করতে হলে ভবিষ্যতে তাদের যেকোনো উপায়ই হোক উৎপাদন বাড়াতে হবে।
এ দিকে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতেই একটি চক্র শিল্প কারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। এখন বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে উপদেষ্টাদের বিশেষভাবে নজর দেয়া জরুরি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
এলএনজি টার্মিনালের দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পেট্রোবাংলা! জোড়া শতকে কিউইদের বিপক্ষে বড় জয় শ্রীলঙ্কার গাজার যুদ্ধে ‘প্রকৃত বিরতির’ আহ্বান ব্লিংকেনের পার্লমেন্টে আস্থা ভোট দেবেন জার্মান চ্যান্সেলর বাতাসে কদবেলের ঘ্রাণ! জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ইউক্রেনকে আরো সহায়তা দিতে ব্লিংকেনের প্রতিশ্রুতি ইমরানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান হলের সিট বণ্টন নিয়ে উত্তপ্ত কুবি, প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করাচি থেকে প্রথম সরাসরি কার্গো পৌঁছেছে চট্টগ্রামে মুখরোচক খাবারে সরগরম লক্ষ্মীবাজারের স্ট্রিট ফুড

সকল