শাস্তির আওতায় আসছে রাজউকের দুর্নীতিবাজরা
- শামছুল ইসলাম
- ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৬
- ৬ জনকে সাময়িক বরখাস্ত, ৪ জনকে বদলি
- ২৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় বাড়ি তৈরির নকশার অনুমোদন সংস্থাটি থেকে নিতে হয়। নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের দেখভাল, ভূমি ছাড়পত্র, প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি, হস্তান্তর, নামজারি, আমমোক্তারনামা, মালিকানা জালিয়াতি সব ক্ষেত্রেই চলে দুর্নীতি। টাকা ছাড়া কোনো সেবাই পাওয়া যায় না। সেবাগ্রহীতাদের ফাইল আটকিয়ে অর্থ আদায় করতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা মিলে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর শাস্তির আওতায় আসছে দুর্নীতিবাজ এসব কর্মচারী। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত তিন মাসে ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করছে সংস্থাটি। ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে দুর্নীতিবাজ এই সিন্ডিকেটের চার সদস্যকে। যাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন সময়ে বিভাগীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। রাজউক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আদিলুর রহমান খান। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে রাজউকের দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেন। এরই মধ্যে এক কর্মকর্তাকে রাজউকের সদস্য (প্রশাসন) পদে পদায়ন করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার তিন মাসের মধ্যে দুর্নীতিবাজ ও অনিয়মের অভিযোগে ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে ২৩ কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় ঢাকার বাইরে বদলি করা হয় চার প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে।
ঢাকার বাইরে বদলি করা কর্মচারীদের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৪ নভেম্বর রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-১) দফতরের ইমরাত পরিদর্শক কাজী মো: আমীর খসরুকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়। ২০০৮ সালে একটি বিভাগীয় মামলায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। একই অর্ডারে নির্বাহী প্রকৌশলী (বৈদ্যুতিক-২) এর দফতরের পাম্প চালক জাহাঙ্গীর আলমকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়। গত বছর এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ২৭ অক্টোবর প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) এর দফতরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নুরুল আলম হেলালকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়। এই কর্মকর্তা গত ২০২০ সালে এক নারীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করলে তাকে গ্রেফতার করে খিলগাঁও থানা পুলিশ। পরিচালকের (আইন) দফতরের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর শরিফ উদ্দিনকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়।
এ ছাড়াও গত তিন মাসে যেসব কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তারা হলেন, জনৈক শামছুদ্দিনের নিকট থেকে এক লাখ টাকা দাবি করার অভিযোগে গত ৫ নভেম্বর প্রশাসন শাখার অফিস সহায়ক সামচুর রহমান। এক লাখ ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করেও সেল পারমিশনের কাজ করে না দেয়ার অভিযোগে গত মাসের ২৮ তারিখে প্রধান প্রকৌশলীর দফতরের অফিস সহায়ক মো: আমিনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা রজু করা হয়। হাজী মো: গিয়াস উদ্দীন ঢালীর প্লটে নকশা অনুমোদনের চুক্তিবদ্ধ ৭০ লাখ টাকা গ্রহণ করার অভিযোগে সহকারী অথরাইজড অফিসার সুরোত আলীকে গত ৫ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জোন-৬ এর পরিচালক কামরুজ্জামান বিভাগীয় মামলাটির তদন্ত করছেন। একই মামলায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পরিচালক (জোন-৩) এর নকশাকার আলমগীর কবীরকে। নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিনা আফরিন বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন একসাথে অনুবেদন করতে অস্বীকৃতি জানালে অসংলগ্ন আচরণ, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার অভিযোগে গত ২১ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) আক্তারুজ্জামান খানকে। রাজউক চেয়ারম্যানের সাথে অশোভন আচরণ ও সমন্বয় সভায় অনুপস্থিতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে জোন-৭ এর পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) ড. মো: আলম মোস্তফা নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমান সরকারের একটি দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সামনে রেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজউককে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে দুর্নীতিবাজ অনেক কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। বেশ কিছু অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি শিগগিরই রাজউক দুর্নীতিমুক্ত এবং জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা