১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অভ্যুত্থানে একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে : অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম

-


রাষ্ট্রের শুধু পোশাক পরিবর্তন হয়েছে, রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রাবন্ধিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে কমরেড আ ফ ম মাহবুবুল হকের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বামপন্থীদের ভূমিকা এবং করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সভার আয়োজন করে আ ফ ম মাহবুবুল হক স্মৃতি সংসদ। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আইয়ুব বিরোধী ’৬৯-এর যে অভ্যুত্থান, সেই অভ্যুত্থানের চালিকাশক্তি ছিল বামপন্থীরা। এর সূত্রপাত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী করেছিলেন। তিনিই ছিলেন এর পরিচালক। বামপন্থীদেরই এখানে বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু আমরা ’৭০ এর নির্বাচনে কী দেখলাম, ক্ষমতা চলে গেল বুর্জোয়াদের হাতে। রাষ্ট্র ভাঙল না, রাষ্ট্র বদলালো না।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র ’৪৭-এ বদলায়নি, রাষ্ট্র ’৭১-এ বদলায়নি। রাষ্ট্র যা ছিল, তা-ই রয়ে গিয়েছে। যে ঔপনিবেশিকতা ছিল ব্রিটিশ আমলে, পাকিস্তানিরা এসে সেরকমই একটি নতুন অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। সেই উপনিবেশের বিরুদ্ধেই লড়াই হচ্ছিল। সেই লড়াইয়ে প্রধান ভূমিকায় ছিল
বামপন্থীরা। তিনি আরো বলেন, কিন্তু তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারেনি।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন রাষ্ট্র তো বদল হয়নি, রাষ্ট্র তো একই রাষ্ট্র রয়েছে। তার আইনকানুনে মিল আছে। শুধু নামে বদলেছে, আয়তনে ছোট হয়েছে। তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক শাসকেরা যেমন এ দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করত, দেশকে তারা নিজেদের দেশ মনে করত না, আজ বাংলাদেশের ধনীরা সেই কাজই করে। তারাই তো আমাদের সম্পদ পাচার করে, ব্যাংক লুট করে, লুণ্ঠন চালায়। আর যতভাবে পারে অর্থ সঞ্চয় করে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন যে অভ্যুত্থান ঘটল, সেই অভ্যুত্থানে কোনো বিপ্লব ঘটেনি। এক চরম ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে। এ পতন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঘটতো, ঘটতে পারতো। তাহলে আজ যারা পলাতক, তাদের পালাতে হতো না, তারা বেঁচে যেত। কিন্তু তারা তা চায়নি বলেই এ অভ্যুত্থান হয়েছে। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। আজ পৃথিবী জুড়েই পুঁজিবাদ ফ্যাসিবাদের রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, এ সময়ে প্রতিটি গ্রাম-ইউনিয়নে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে হবে। তাহলে এখন যে ছাত্ররা বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরছে, পথের সন্ধান পাচ্ছে না, তারা পথের সন্ধান পাবে।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
দেয়ালে দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিগুলোর মধ্যে যে আকাক্সক্ষা আছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি উল্লেখ করে বলেন, গ্রাফিতিগুলোর মধ্যে যে ভাব, ভাষা ও তাগিদ আছে, তার কোনো প্রতিফলন আমরা সরকারের মধ্যে দেখছি না। দেয়ালের গ্রাফিতি ও আন্দোলনে যে আকাক্সক্ষাগুলো তৈরি হয়েছিল, তার সঙ্গে সরকারের ভূমিকা ও তৎপরতার বড় অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মানুষের মাঝে অহেতুক একটি বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। ২৪-এর আন্দোলন কোনো বিপ্লব নয়, এটি কোনো অভ্যুত্থান। সমাজ ইতিহাসের একটি নিয়ম হলো মানুষের চেতনা অসমভাবে বিকশিত হয়। সবার চেতনা একসঙ্গে বিকশিত হয় না। তবে গণ-অভ্যুত্থানের সময় একেবারে নিম্নস্তরের চেতনাসম্পন্ন মানুষও সামনে চলে আসে, এটি হলো একটি লক্ষণ।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মুসলমানরা যখন নামাজ পড়েন, তখন প্রথমে ডান দিকে সালাম দেন, পরে বাম দিকে সালাম দেন। তাই জিন্দেগিভর যদি ডান দিকে সালাম দিয়ে বসে থাকেন, তাহলে তো নামাজ হবে না। এবার একটু বামদিকে সালাম ফেরান। আসলে বামপন্থা ছাড়া এদেশকে রক্ষা করা সম্ভব না।
সভায় সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবু সাঈদ খান। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, হারুনুর রশীদ ভুইয়া, নাসির উদ্দিন আহমেদ নসু, মহিউদ্দিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement