২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিএসএমএমইউতে চিকিৎসককে পদোন্নতি ও ডিগ্রি অর্জনে বাধা

-

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বিগত আওয়ামী সরকারের সমর্থক চিকিৎসকরা প্রতিপক্ষকে দমন করতে মৌলিক অধিকার হরণ করতেও দ্বিধা করেননি। বিগত ১৫ বছর ৭ মাসে এমন অসংখ্য ঘটনার প্রমাণ রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনই মৌলিক অধিকার হরণের শিকার হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের স্ববেতনে সহকারী অধ্যাপক ডা: মো: আতিয়ার রহমান। উল্লেখ্য, তিনি সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় ৩০০ চিকিৎসকের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তি, রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়া, নিহত ও আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাকেই আওয়ামী সরকারের পুরো সময়টাতে তার প্রতিপক্ষরা শুধু পদোন্নতি বঞ্চিতই করেই থেমে থাকেনি, স্নাতকোত্তর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনেও বাধা দিয়েছে। ফলে তার সহকর্মী, এমনকি ছাত্রদের থেকেও জুনিয়র হয়ে আছেন তিনি। তার জুনিয়ররা ও ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়ে গেছেন। তিনি এখনো স্ববেতনে সহকারী অধ্যাপক। ১১তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের একজন চিকিৎসক হিসেবে তৎকালীন আইপিজিএমআর (বহুল পরিচিত পিজি) হাসপাতালে শিশু বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর তাকে অন্যত্র বদলি করে দেয়ার প্রথম প্রচেষ্টা সফল হয়নি ‘যিনি যে অবস্থায় আছেন তিনি সে অবস্থায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বপদে বহাল থাকতে পারবেন’ মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৯৮ পাস হওয়ার কারণে। এরপর ১৯৯৯ সালে তিনি ডিসিএইচ (শিশু) নামক একটি উচ্চতর (ডিপ্লোমা) ডিগ্রি অর্জন করেন। এই অজুহাতে ২০০১ সালে এমডি কোর্সে চান্স পাওয়ার পরও তাকে কোর্সে যোগ দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। যোগদান করতে না দেয়ার কারণ হিসেবে একটি হাস্যকর যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, ‘তিনি ইতোমধ্যে একটি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।’ পরে আবার ২০০২ সালে পরীক্ষা দিয়ে এমডি (শিশু) কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেয়ে পার্ট-১ পরীক্ষার তিন বিষয়ের মধ্যে দুই বিষয়ে পাস করেন কিন্তু একটি বিষয়ে সাতবার অনুত্তীর্ণ হন (বরং অনুত্তীর্ণ দেখানো হয়)। পার্ট-১ পরীক্ষার এক বিষয়ে সাতবার অনুত্তীর্ণ হলে তার বিভাগের চেয়ারম্যান এমডি কোর্সের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে এর কারণ জানতে চান। তখন বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে এমডি কোর্সের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, ‘এই লোক (ডা: মো: আতিয়ার রহমান) বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতা, বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) নেতা, বিজি প্র্যাকটিশনার। সে কারণে তাকে পাস করানো যাবে না’ বলে জানান। কিন্তু ইতোমধ্যে ডা: মো: আতিয়ার রহমান একই এমডি কোর্সের পার্ট-২ পাস করে ফেলেন। তা সত্ত্বেও তাকে শেষ পর্যন্ত এমডি কোর্স থেকে বের করে দেয়া হয়। ডা: মো: আতিয়ার রহমান বলেন, এমডি কোর্স সম্পন্ন করতে বাধা দেয়ায় আমি ২০০৬ সালে ফেলো কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন বা এফসিপিএস পার্ট-১ পাস করি এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ বার পরীক্ষা দেই। কিন্তু কয়েকবার লিখিত পরীক্ষায় পার্ট-২ পাস করলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে ভিন্ন মতাদর্শী বলে এবং পেশাজীবী অঙ্গনে নেতৃত্ব দেই এই অজুহাতে।
উচ্চতর কোর্সে পাস করতে না পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্তীকৃত এই চিকিৎসককে ২০০৬ সালে স্ববেতনে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে, দুই বছর পর ২০০৮ সালে নিয়মিত হওয়ার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত তাকে তার প্রাপ্য অধিকার দেয়া হয়নি।
এ দিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়নের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী প্রশাসন ডা: মো: আতিয়ার রহমানকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়মিত করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেটে তা পাস করানো হয়নি।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement