সিলেটের ১৮ শহীদ পরিবারকে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ৯০ লাখ টাকা অনুদান
- সিলেট ব্যুরো
- ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সিলেট বিভাগের ১৮ শহীদ পরিবারকে আর্থিক অনুদান দিয়েছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন। গতকাল শনিবার সকালে সিলেট জেলা প্রশাসক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একটি সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে পরিবার প্রতি ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি সার্জিস আলম ও প্রধান নির্বাহী মীর স্নিগ্ধ।
শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর স্নিগ্ধ বলেন, বিগত আন্দোলনে সিলেট বিভাগের ৩২ জন ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে শনিবার ১৮ জন শহীদের পরিবার উপস্থিত থাকায় তাদের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেয়া হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে নিহত দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের পরিবারের পক্ষে চেক গ্রহণ করেন তুরাবের মা মমতাজ বেগম ও ভাই আবুল আহসান মো: আজরফ (জাবুর)।
বাকি শহীদদের আইডেন্টিফাই করা হচ্ছে। দু-তিন দিনের মধ্যে তাদের পরিবারের হাতে চেকগুলা তুলে দেয়া হবে।
চেক বিতরণকালে ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সার্জিস আলম বলেন, বিগত আন্দোলনে ২ হাজারজন শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। আমরা এখন পর্যন্ত দেশে ৮৭১ জন শহীদের আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি। বাকিদেরও আইডেন্টিফাই করার কাজ চলছে। আহত অনেক হলেও আমরা এখন পর্যন্ত ২৪ হাজারজন গুরুতর আহতকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদেরকেও আর্থিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফাউন্ডেশনের হেল্প লাইন নাম্বার ১৬০০০-এ যোগাযোগ করে আহতরা সহযোগিতা পেতে পারেন।
সার্জিস আলম বলেন, এই চেক বিতরণই শেষ কার্যক্রম নয়, শুরু মাত্র। আমরা সব শহীদ পরিবারের কর্মসংস্থান, চাকরি এবং স্থায়ী ভাতার ব্যবস্থা করবো। যত দিন ফাউন্ডেশন থাকবে তত দিন শহীদ পরিবারের পাশে আমরা থাকবো।
তিনি বলেন, মামলার ব্যাপারেও আমাদের লিগ্যাল উইং রয়েছে। সারা দেশের মামলাগুলো তারা দেখভাল করবেন। অযথা কাউকে হয়রানির সুযোগ থাকবে না।
এ সময় সার্জিস আলম ও স্নিগ্ধ ছাড়াও ফাউন্ডেশনের ১০ সদস্যের টিম সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়কদের মধ্য থেকে আসাদুল্লাহ আল গালিব, হাফিজুল ইসলাম, ফয়সাল হোসাইন ও শিশির ছাড়া অন্যান্য সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন।
শুধু নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি : সিলেটে সারজিস আলম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, শুধু নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি, অর্ধলক্ষ মানুষ রক্ত দেয়নি। রাষ্ট্রব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনের জন্য ছাত্র-জনতার এই রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থান। সুতরাং প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। কোনো বড় দলই বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্টকে নড়াতে পারেনি। ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও রক্তের বিনিময়ে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে।
তিনি গতকাল শনিবার সকালে সিলেটের শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক অনুদান প্রদান শেষে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস বলেন, আমরা বলছি না সংস্কার করতে ৫ বছর লাগবে। কমপক্ষে একটা যৌক্তিক সময় এই সরকারকে দিতে হবে। নির্বাচনের জন্য যে নির্বাচন কমিশন দরকার সেই কমিশনকে সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন কমিশন একটি ভোটার তালিকা দিলো আর তফসিল দিলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে প্রশাসন-বিচার বিভাগসহ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
সারজিস আরো বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি নির্বাচন এলে অনেকেই নানা ইশতেহার দেয়। কিন্তু কোনোভাবে ক্ষমতায় গেলেই তারা সেটা ভুলে যায়। তাই আমাদের উদ্দেশ্য হলো ফ্যাসিবাদী শাসনে ধ্বংসপ্রায় রাষ্ট্রযন্ত্রেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিস্টেমের সংস্কার। এ জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন নেই। তবে ন্যূনতম একটা সময় এই সরকারকে দিতে হবে।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেটের সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সিলেট জেলা প্রশাসক মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সিলেটের ৩২ পরিবারের মধ্য থেকে ১৮ শহীদ পরিবারের হাতে ৫ লাখ টাকা করে মোট ৯০ লাখ টাকার চেক বিতরণ করেন ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি সারজিস আলম ও সিইও মীর স্নিগ্ধ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা