রংপুরে নিজ ফ্লাটে আইনজীবীর রহস্যজনক মৃত্যু, চিরকুট উদ্ধার
- রংপুর ব্যুরো
- ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬
নিজ ফ্লাট থেকে মুস্তাকিম ইসলাম নামের একজন আইনজীবীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় চলছে রংপুর মহানগরীতে। স্বজনরা জানিয়েছেন, দরজা ভেঙ্গে তার লাশ পাওয়া যায় মেঝেতে। ফ্যানের সাথে পেচানো ছিল ওড়না। ঘটনার সময় তার স্ত্রী ছিলেন বাবার বাড়িতে। পুলিশ লাশের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে। তাতে ‘আমি রংপুর বারে কোনো রাজনীতি করতে চাই নাই। কিন্তু নাম না বলি তার কারণে বাধ্য হয়েছি।’ লেখাসহ তিনজনের নাম, হতাশা এবং ব্যাংক একাউন্টসহ টাকা পয়সা লেনদেনের তথ্য ছিল। ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা চিরকুটের ফরেনসিক তথ্য এবং ময়না তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনা গত শুক্রবার রাতের। রংপুর মহানগরীর মুলাটোল ব্যাংক কলোনির নিজ বাসার দোতলা থেকে উদ্ধার হয় মুস্তাকিম ইসলামের লাশ। তিনি বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের ট্যাক্সেরহাট এলাকার খাদেমুল ইসলামের ছেলে।
মুসতাকিনের ছোট ভাই সোহান জানান, ভাবী রিমু রোববার উনার বাবার বাড়িতে যান বেড়াতে। ভাই একাই ছিলেন ফ্লাটে। ছুটির দিন কোর্টে না গেলে সাধারণত ভাই বাসাতেই থাকে এবং ঘুমায়। আমরাও সেটাই মনে করেছিলাম। কিন্তু শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভাইয়ের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তার দরজায় আমি আমার স্ত্রীসহ বাড়ির লোকজন নক করি। কিন্তু উত্তর না পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভাড়াটিয়াসহ দরজার তালা ভেঙে ঘরে ঢুকি। দেখতে পাই ভাই মেঝেতে পড়ে আছে। ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলানো। পরে পুলিশ আসে।
ঘটনাস্থলে থাকা মুসতাকিনের মামা শ্বশুর রাশেদ মিলন চৌধুরী ডালিম জানান, প্রথমে আমি রাত ১২টায় ফোন পাই অসুস্থতার। ৫ মিনিট পর ফোন পাই আত্মহত্যার। সাথে সাথে আমার ভাগিনি রিমুকে নিয়ে সেখানে আসি।
ডালিম জানান, মাত্র ২ বছর আগে বিয়ে হয়েছে ওদের। একজন মানুষ আত্মহত্যা করলে যে সিনড্রোম থাকার কথা সেটা আমি এসে দেখতে পাইনি।
রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) আব্দুর রশিদ জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা রাতেই লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছি ময়না তদন্তের জন্য। লাশের কাছে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। তাতে তাকে জোর করে রাজনীতিতে নামানো, হতাশা এবং লেনদেনের তথ্য লেখা আছে। এ ছাড়া পারিবারিক, পারিপার্শ্বিকসহ সব বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। চিরকুটের হাতের লেখাটি তার কি না সে বিষয়ে ওপেনিয়ন নেয়া হবে। এরপর ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আসবে। তখন আমরা বলতে পারব এটি হত্যা না আত্মহত্যা।
এদিকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটটি আসে এ প্রতিবেদকের হাতে। চিরকুটটিতে লেখা অসংলগ্ন ছিল এবং অনেক বানান ভুল ছিল। তাতে লেখা ছিল ‘আমি ফ্রেশ মাইন্ডে জিয়া আইন ছাত্র ফোরাম করেছি বন্ধুদের সাথে। তখন রাজনীতি বুঝতাম না। যে কই জন। আমি রংপুর বারে কোনো রাজনীতি করতে চাই নাই। কিন্তু নাম না বলি তার কারণে বাধ্য হয়েছি। এখনও কোন দল করতে চাই নাই। তিনি বলার কারণে করতে চেয়েছিলাম। বলছে আমি আছি।’ আরো লেখা আছে, ‘জীবনে কোনদিন কারো ক্ষতি করেনি। কারো কাছ থেকে বেআইনিভাবে কোন টাকা পয়সা নেয়নি।’
চিরকুটে আরো লেখা ছিল , ‘এবং ব্যাংকের সকল টাকা আমার মায়ের পেনশন টাকা। ছোট ভাই পাবে। সোহান পাবে এবং মজিদ কিছু টাকা দান করতে। সে ভাবে আমাকে আমার জানামতে কার সাথে কোন দিন অন্যায় করিনি। আর আমি মানষিকভাবে ভীষণভাবে অসুস্থ ছিলাম।’
চিরকুটে লেখা ছিল, ‘রনি ভাই আপনি আর বচ মিলে যে ক্ষতি করেছেন ক্ষমা করে দিলাম। শামিন ভাই মামলার বিষয় আমি জিজ্ঞাসা করিছিন, বদরগঞ্জ আমার বন্ধু কাকা আসামী ছিল।’
তদন্ত সূত্রগুলো জানায়, যে চিরকুটটি পাওয়া গেছে তাতে মনে হয়েছে কারো লেখা ওই চিঠি। কারণ অনেক লাইনের ভাষাতে সেটা স্পস্ট। এ ছাড়াও বানান ভুল আছে। সেখানে উল্লেখিত, রনি, বস ও শামিমের পরিচয় জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ ছাড়াও যৌতুক মামলা, কুড়িগ্রামের অ্যাডভোকেটের বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে।
মুস্তাকিমের সাথে ২ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল রংপুরের তারাগঞ্জের হাড়িয়াকুঠি এলাকার রিমুর। রিমুর ছিল এটা দ্বিতীয় বিয়ে। ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতি এবং ঢাকায় প্রাকটিসের সময় জিয়া পরিষদের সাথে জড়িত ছিলেন মুস্তাকিম। ২০১৮ সাল থেকে রংপুর বারে প্রাকটিস করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা