২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তাকে হাত করে জমি দখল করত অনলাইন গ্রুপ

-

অবৈধ দখল, জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে অনলাইন গ্রুপ নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তারা ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ের সাবেক এক সেনা কর্মকর্তাকে মালিক করে অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা কামিয়ে অবৈধভাবে পাচার করেছেন। তাদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে। দুদক অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করছে।
অভিযোগের তথ্য মতে, অনলাইন গ্রুপের এমডির নাম খান মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান। ঢাকা সেনানিবাস এলাকার আশপাশে মূল্যবান জমি জালজালিয়াতির মাধ্যমে দখলে নিয়ে তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আর এই জালিয়াতিতে সহযোগী ছিলেন, বরখাস্তকৃত সেনা কর্মকর্তা মো: মজিবুর রহমান। তিনি আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি ছিলেন। বিশেষ বাহিনীর গোপন নথিতে অনলাইন গ্রুপের মালিকানায় বরখাস্তকৃত ল্যাফটেন্যান্ট জেনারেল মো: মজিবুর রহমানের নাম রয়েছে। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এস এস এফ বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনলাইন গ্রুপের অপর মালিক মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ঢাকা সেনানিবাসের আশপাশে মানিকদি, মাটিকাটা ও ইসিবি চত্বর এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করেন।
ইসিবি চত্বরে অনলাইন সিটি, বিজে টাওয়ার, ইসিবি চত্বরে ওয়াসি টাওয়ারে আনুমানিক ৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে মজিবুর রহমানের। এসব ফ্ল্যাট খান মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের কাছ থেকে অবৈধ দখলবাজির সহযোগী হিসেবে উপঢৌকন পেয়েছেন। ইসিবি চত্বর থেকে পশ্চিমে ব্লুমুন রেস্টুরেন্টনসংলগ্ন ও মাষ্টারটেকে কয়েক একর জমির মালিকানা বরখাস্তকৃত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: মজিবুর রহমানের ও খান মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের নামে। তারা দখল করেছেন শহীদ পরিবারের জমিও। শহীদ পরিবারের সন্তান সৈয়দা মোছাদ্দিকা দিকু। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সৈয়দ সিরাজ উদ্দিনের মেয়ে। ইসিবি চত্বরের কিছুটা দূরে, দক্ষিণ মানিকদীতে তার পরিবারের ৩ কাঠার প্লট। ২০০৪ সালে জমিটি কিনেন তারা। বছরখানেক আগে, অনলাইন গ্রুপ জমিটি কেনার প্রস্তাব দেয়। তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়নি শহীদ পরিবারটি। তাই জোর করেই এটি দখল করে নেয় অনলাইন গ্রুপ। এখন নিজের জমিতেই যেতে পারছে না শহীদ পরিবারটি।
সেনাবাহিনীর অরসরপ্রাপ্ত সৈনিক ফিরোজ মিয়া ঢাকায় জমি কিনে অনলাইন গ্রুপের খপ্পরে পড়েন। তিনি জানান, জাতিসঙ্ঘ মিশন থেকে ফিরে সেই টাকায় নিষ্কণ্টক জমি কিনেছিলেন। তাতে চোখ পড়ে অনলাইন গ্রুপের। তারপর নানা দুর্বিপাকে যেতে হয়েছে তার।
অপর ভুক্তভোগী স্বপ্না আক্তার বলেন, ইসিবি চত্বরে তারা কয়েকজন মিলে ৪১টি শেয়ারে ১২ কাঠার একটি জমি কিনেন। তাতেও চোখ পড়ে অনলাইন গ্রুপের। জমিটি দখল করতে পাঁচটি শেয়ার প্রতারণার মাধ্যমে কিনে নেন। এরপর পুরো জমি নেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় ভুক্তভোগী নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, তদবিরবাজ, প্রতারক, জালিয়াতির আমলনামায় সেরা খান মো: আক্তারুজ্জামান ওই এলাকার সর্বত্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। কেউ জমি বিক্রি করতে চাইলে তিনি নামমূল্যে ভুয়া চেক দিয়ে জমি বায়না করে দখল করে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে।
দখলের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে মানি লন্ডারিং করে দেশে ও বিদেশে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস, ইসিবি, মাটিকাটা, মানিকদি এলাকার সাধারণ জমির মালিকদের কাছে এক আতঙ্কের নাম আক্তার। কোনো জমিতে তার চোখ পড়লে যেকোনো মূল্যে সেটা দখল করে নেন তিনি। কেউ বাধা দিলে চাইলে শুরু হয় মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি।
অভিযোগের বিষয়ে খান মো: আক্তারুজ্জামানের অফিসে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, স্যার বাইরে আছেন।
এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জানান, ক্যান্টনমেন্ট, মানিকদী ও মাটিকাটা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আক্তারের নাম রয়েছে। তার বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে।


আরো সংবাদ



premium cement