আশঙ্কাজনক হারে কমছে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- পরীক্ষাসংক্রান্ত জটিলতায় ড্রপ আউট ৪০ শতাংশ
- কলেজ ও কারিগরিতে একযোগে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির দাবি
দেশের সরকারি ও বেসরকারি কারিগরি বা পলিটেকনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বিশেষ করে ২০২২ সালের পর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি ও পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে নতুন প্রবিধান কার্যকর করার ফলে সঙ্কট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন প্রবিধানে পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন ও ভর্তির সময়সংক্রান্ত বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না থাকায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বেড়েছে ড্রপ আউটের সংখ্যা। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২২ সালের আগে সরকারি পলিটেকনিক কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল ৪৯ হাজার ৮০০ জন; কিন্তু ২০২৩ সালে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৩৮ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী। অপর দিকে বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজগুলোতে ২০২২ সালের আগে ভর্তির সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার আর পরের বছরে ভর্তি হয়েছে ৩০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ভর্তি সংখ্যাই কমে গেছে ৩৪ হাজারের বেশি।
এ দিকে বিভিন্ন বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তিসংক্রান্ত বিষয়ে সমস্যা আগেও ছিল। তবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর করা নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষার মানে অবনতির কারণে ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়েছে পলিটেকনিক শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষায়তনগুলোতে শিক্ষার্থী আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে এবং ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ড্রপ আউটের সংখ্যাও বেড়ে গেছে।
অপর দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর সূত্রে জানা গেছে, অর্ধশতাব্দী আগে থেকে কারিগরিতে মোটামুটি দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্দেশ্যে সরকারিভাবে কিছু পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়। সেখান থেকে চার বছর মেয়াদের শিক্ষা সফলভাবে সম্পন্নকারীদের সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। মূলত এসব ডিপ্লোমাধারী প্রকৌশলীদেরই প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নির্মাণসহ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো সম্পন্ন হয়। প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকার কারণে তাদের অনেকে পরে উদ্যোক্তা হয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া ডিপ্লোমাধারী শিক্ষার্থীরা বিদেশে গিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের তুলনায় দ্বিগুণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনেন। এসব ইতিবাচক কারণে প্রাইভেট সেক্টরে ইনস্টিটিউট স্থাপনের অনুমতি দেয়ার পর দেশে এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক প্রাইভেট পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তবে ইদানীংকালে পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যেমন এসএসসির রেজাল্ট হওয়ার পরে কলেজগুলোর ভর্তি সম্পন্ন হয়। কিন্তু কলেজে ভর্তির পর শুরু হয় পলিটেকনিকে ভর্তি প্রক্রিয়া। এতে সমস্যা হলো- শিক্ষার্থীরা পলিটেকনিকে ব্যর্থ হলে অন্যত্র ভর্তির আর সুযোগ থাকে না। ফলে অবস্থা এমন হয়েছে যে, সরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি ইচ্ছুক এবং অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে তিন/চারবার আহ্বান করেও সব আসন পূরণ করা যাচ্ছে না। একইভাবে বেসরকারিগুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়।
শিক্ষার্থীরাই অভিযোগ করছেন, সেরকারি পলিটেকনিকগুলোতে শিক্ষকসঙ্কটে শিক্ষার মান খুব খারাপ হয়ে পড়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বোর্ড প্রণীত ‘ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রম প্রবিধান’ অনুসৃত হয়। এ প্রবিধানে প্রয়োজনে নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করে নতুন ঘোষণা করা হয়। প্রবিধান অনুযায়ী চার বছরমেয়াদি ডিপ্লেøামা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে মোট আট সেমিস্টার এবং প্রত্যেকটি শেষে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ প্রবিধান অনুযায়ী ইনস্টিটিউটগুলো অভ্যন্তরীণভাবে প্রথম পাঁচটি পরীক্ষা গ্রহণ ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে পারত। ২০১৬ সালে তা চারটিতে নামিয়ে আনা হয়। আর ২০২২ প্রবিধানে আগের নিয়ম পাল্টে সব পরীক্ষাই বোর্ড গ্রহণ করবে বলে নিয়ম করা হয়েছে। এসব কারণে পলিটেকনিকগুলোতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি কমে গেছে। ২০১০-১২ সালে দেশে এসএসসি পাস করত ১০ লাখ ছাত্র-ছাত্রী। এখন ১৭/১৮ লাখ এসএসসি পাস করলেও ভর্তি হচ্ছে কম। ২০২২ প্রবিধান প্রবর্তন করার আগে সরকারি কলেজগুলোতে ভর্তি হতো ৪৯ হাজার ৮০০ জন, এখন হচ্ছে ৩৮ হাজার ৬০০। আর প্রাইভেটগুলোতে ভর্তি হতো ৫২ হাজার, এখন হচ্ছে ৩০ হাজার।
বাংলাদেশ বেসরকারি পলিটেকনিক উদ্যোক্তা সমিতির সভাপতি মো: ইদরীস আলী গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সচিবের সাথে বৈঠকে প্রস্তাব আকারে তুলে ধরেছি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আমাদের একটি প্রতিনিধিদল কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিবের সাথে বৈঠকে পলিটেকনিকগুলোর সমস্যা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান পরিচালক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে সম্প্রতি বৈঠকে বেশ কিছু সুপারিশ ও প্রস্তাব পেয়েছি। এগুলো নিয়ে আমরা বিবেচনা করব। তবে কিছু বিষয় আছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। সবগুলো বিষয় নিয়েই একটি সমাধানের পথ বের করা হবে। আশা করছি যৌক্তিক বিষয়গুলোর সমাধান করা সম্ভব হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা