সেন্টমার্টিনে পর্যটক কমানো পুনর্বিবেচনার দাবি
- কক্সবাজার অফিস
- ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকের আগমন সীমিতকরণ ও রাতযাপন নিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের নেতারা। স্থানীয় বিশিষ্টজন এবং স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা না করে মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন জানান, পুরো পর্যটন মৌসুমের মাঝে কোন সময় রাত্রিযাপন, আবার কোন সময়ে রাত্রিযাপন নয় এ ধরনের বৈষম্য পর্যটনশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ সময় বলা হয়, সম্প্রতি বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য কিছু বিধিনিষেধ থাকবে। নভেম্বরে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি থাকলেও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন মাত্র দুই হাজার পর্যটক রাতযাপনের সুযোগ পাবেন এবং ফেব্রুয়ারিতে পুরোপুরি বন্ধ রাখা হবে পর্যটন কার্যক্রম। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সম্প্রতি দ্বীপবাসী এবং পর্যটন সংশ্লিষ্টরা দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে নাগরিক ফোরাম সরকারের এ রকম সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে মূলত দ্বীপটির পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য। তবে কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম মনে করে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব। পর্যটন পুরোপুরি বন্ধ না করে, বরং সুশৃঙ্খল ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে পরিবেশ সুরক্ষা এবং দ্বীপবাসীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা যেতে পারে। দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবিকা পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। নাগরিক ফোরাম মনে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা যেতে পারে। পর্যটক সংখ্যা পুরোপুরি সীমিত না করে একটি স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে। এ ছাড়া ব্রিফিংয়ে উখিয়া উপজেলার ইনানী সমুদ্রসৈকতে নৌবাহিনীর জেটি অপসারণ করার দাবি জানিয়ে নাগরিক ফোরাম নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশেষজ্ঞ মহলের কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই এই জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। নাগরিক ফোরাম ইনানী সমুদ্রসৈকতে নির্মিত বিতর্কিত নৌবাহিনীর জেটি অপসারণ নিয়ে শুরু থেকে দাবি জানিয়ে আসছে। এই জেটি অপসারণ নিয়ে নাগরিক ফোরাম ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে রিট আবেদন করলে রুল ইস্যু করা হয়। এই জেটি পরিবেশ সংরক্ষিত এলাকা (ইসিএ) আইন ভঙ্গ করে নির্মাণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশবিদ ও স্থানীয় সংগঠনগুলোর মতে এটি সৈকতের পরিবেশ ও মেরিন ড্রাইভ সড়কের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
এ ছাড়া উচ্চ আদালতে এ-সংক্রান্ত রিট থাকা থাকা সত্ত্বেও কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের মালিকানাধীন জাহাজকে জেটিটি ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম উদ্বিগ্ন এবং দ্রুত জেটি অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম নেতৃবৃন্দ জানান, মহেশখালী দ্বীপসহ জেলার পর্যটনের নতুন নতুন স্পট নির্ধারণের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। মহেশখালী দ্বীপ এবং কক্সবাজার জেলার নতুন পর্যটন স্পটগুলো প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠছে। মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ যা আদিনাথ মন্দির এবং ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দিরসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের জন্য খ্যাত। জেলায় পর্যটনের নতুন স্পট সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন- কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দিন বাহারি, প্রফেসর আনোয়ারুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, টুয়াকের উপদেষ্টা মফিজুর রহমান প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা