২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এনসিটিবির পরিদর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের টেন্ডারে জালিয়াতি

খোলার ১ দিন আগে শর্ত পরিবর্তন : জমাদানের সময়ও বৃদ্ধি
-

বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ন্ত্রণে পরিদর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বড় ধরনের জালিয়াতি ধরা পড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই মুদ্রণের পর বইয়ের কাগজ, কালি ও ছাপার মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতেই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নিয়োগকৃত একাধিক ইনস্পেকশন বা পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান কাজ করে। মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই পরিদর্শনের জন্য প্রতি বছর টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পরিদর্শক টিমের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে বইয়ের নমুনা কপি সংগ্রহ করে সেগুলোর মান কতটুকু বা কোন পর্যায়ে রয়েছে তা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন এনসিটিবিকে দিয়ে থাকে।

সূত্র মতে, পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান দুই পর্বে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রি-ডেলিভারি ইনস্পেকশন (পিডিআই) এবং অপর প্রক্রিয়াটি হচ্ছে পোস্ট ল্যান্ডিং ইনস্পেকশন (পিএলআই)। কিন্তু চলতি বছর এই পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান নিয়োগের টেন্ডারে বড় ধরনের জালিয়াতি ধরা পড়েছে। গতকাল সোমবার এই টেন্ডার খোলার দিন ধার্য থাকলেও একদিন আগে গত রোববার এই টেন্ডারে বেশ কিছু বিষয়ে ত্রুটি বা জালিয়াতি ধরা পড়ায় তড়িঘড়ি করে তা সংশোধনের জন্য সময়ও বাড়ানো হয়েছে।
গত ২৩ অক্টোবর টেন্ডার আহ্বান করা হলেও টেন্ডার জমা দেয়ার সময় নির্ধারণ করা হয় ৩১ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। আর খোলার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৪ নভেম্বর। কিন্তু টেন্ডারে অংশ নেয়ার জন্য বা দরপত্র জমা দেয়ার জন্য সময় পাওয়া যায় মাত্র দুই দিন। কেননা ৩১ অক্টোবরের পর ১ এবং ২ নভেম্বর দুই দিনই ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্রবার এবং শনিবার। এরপর গত রোববার মাত্র একদিন সময় দিয়ে ঠিক পরের দিনই সোমবার টেন্ডার খোলার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সোমবার বিজ্ঞপ্তি পরিবর্তন করে সময় বাড়িয়ে আগামী ৬ নভেম্বর পর্যন্ত টেন্ডার জমা এবং ৭ নভেম্বর টেন্ডার খোলার তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, পতিত আওয়ামী লীগের সময়ে গত ১৫ বছর ধরেই দেখা গেছে এনসিটিবির পরিদর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। বিশেষ এক দু’টি প্রতিষ্ঠানের সাথে টেন্ডারের আগেই গোপন চুক্তিতে লেনদেন হতো। পরে টেন্ডারে কারসাজি করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়ার লোকদেখানোর প্রক্রিয়া হয় মাত্র। বিগত বছরগুলোতে টেন্ডার হয়েছিল মূলত লোকদেখানো বা আনুষ্ঠানিকতারর প্রক্রিয়ার জন্য। চলতি বছরের টেন্ডারেও সেই রকমই একটি জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, ইনস্পেকশন প্রতিষ্ঠানের আড়ালে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিদর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো পুস্তক মুদ্রণকারী প্রেস মালিকদের কাছে সিন্ডিকেট করে কাগজ কালি মুদ্রণের প্লেট, গাম ও আঠা বিক্রি করেন। এ বছরও টেন্ডার ওপেন হওয়ার আগেই কিছু প্রতিষ্ঠান ইনম্পেকশন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পাওয়ার আগেই তারা পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের এই সব উপকরণ বেচাবিক্রির দেনদরবার শুরু করেছেন। এসব কাজকর্মে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে যেখানে এখনো টেন্ডার জমা বা খোলার সময় হয়নি অথচ এক-দু’টি প্রতিষ্ঠান এখনই নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে তারা পরিদর্শক হিসেবে কাজ পেয়ে গেছেন বা পেতে যাচ্ছেন। ফলে টেন্ডারের কিছু বিষয়ের অস্পষ্টতা টেন্ডারের জালিয়াতির পক্ষেই সাক্ষ্য দেয়।

এদিকে পাঠ্যবই ইনস্পেকশনের কাজ বাগিয়ে নেয়ার বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই অভিযোগ উঠেছে। আর টেন্ডারেও বেশ কিছু বিষয়ে অসঙ্গতি বা বিচ্যুতি ঘটেছে। যেমন টেন্ডার শিডিউলের ১৪ নম্বর পেজে প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিফিকেশনের শর্তে হিসেবে আইটিটি ক্লজ নং ১১.১(এ) তে বলা হয়েছে পরিদর্শন কাজে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে পাবলিক জেনারেল এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে। অর্থাৎ সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই একই টেন্ডারের পত্রিকার বিজ্ঞাপনে যে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে সেখানে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে সরকারি এবং বেসরকারি (পাবলিক ও প্রাইভেট) প্রতিষ্ঠানের কাজ করার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। একই টেন্ডারে দুই ধরনের শর্ত জুড়ে দেয়ায় বিষয়টি অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছেই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো: হাফিজুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, প্রথম টেন্ডার শিডিউলে কিছুটা ভুল ছিল। আমরা সেই ভুল এখন সংশোধন করে নতুন করে সময়ও তিন দিন বাড়িয়েছি। তিনি বলেন, টেন্ডারে অংশ নেয়ার জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় দেয়ার বিষয়ে প্রথমে আমরা শুক্রবার ও শনিবার মাঝখানে দু’দিনের এই সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়টি খেয়াল করিনি। পরে যখন বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে আমরা তাই সময় আরো তিন দিন বাড়িয়ে দিয়েছি। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো রকম অনিয়ম বা জালিয়াতির সুযোগ নেই। আমরা একটি বিশেষ সময়ে এনসিটিবির দায়িত্বে এসেছি। তাই চেষ্টা করব সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব আর দক্ষতার পরিচয় দিয়ে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রত্যেকটি কাজ করার জন্য। কাজেই অনিয়মেরতো কোনো সুযোগই এখানে নেই। কাউকে আমরা সে ধরনের কোনো সুযোগ দেবো না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সিলেটে ট্রাক ও বাসচাপায় নিহত ২ মানিকগঞ্জে প্রলোভন দেখিয়ে শাহাবাগে লোক নেয়ার মূলহোতা দবিরসহ আটক ৫ মধ্যাহ্নভোজের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নিলো বাংলাদেশ সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলবে কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর নিহত জামায়াতের সাথে ইইউ অন্তর্ভূক্ত ৮টি দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক মনিরামপুরে শ্রমিক দলের সভাপতির উপর হামলা ‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বিএনপি’ দেশব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত রোগে ভুগছে ৬৫ লাখ মানুষ গ্রেড-১ এ পদোন্নতি পেলেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডিজি ডা. রেয়াজুল হক ‘বড় কোনো পরিকল্পনা না থাকলে এক দিনে এতগুলো ঘটনা ঘটতো না’

সকল