নম্বর জালিয়াতি করে শিক্ষক হওয়ার অভিযোগ নূর নুসরাতের বিরুদ্ধে
- রাবি প্রতিনিধি
- ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে শিক্ষক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নূর নুসরাত সুলতানার বিরুদ্ধে। বিভাগটির সাবেক ছাত্র বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো: নূরুল হুদা হাইকোর্টে তার বিরুদ্ধে রিট দায়ের করেন। ফলে নূর নুসরাত সুলতানাসহ আইন বিভাগের তিন শিক্ষকের নিয়োগ অবৈধ বলে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
নূর নুসরাত সুলতানা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডুর মেয়ে। বাবার তদবিরে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের সময়ে নিয়োগ পান তিনি। বিভাগের অন্য দুই শিক্ষক হলেন আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সালাউদ্দিন সাইমুম ও বনশ্রী রানী, যিনি এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
এদিকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ইউজিসির প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনের ২১ নং পর্যবেক্ষণে নূর নুসরাতের এ নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেন ইউজিসির তদন্ত কমিটি।
২০১৮ সালের আইন বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী স্নাতক বা স্নাতকোত্তর যেকোনো একটিতে সনাতনী পদ্ধতিতে প্রথম শ্রেণী এবং গ্রেডিং সিস্টেমে সিজিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। কিন্তু নূর নুসরাত সুলতানা একটিতেও প্রথম শ্রেণী বা সিজিপিএ ৩.৫০ নেই বলে ইউজিসির করা তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। তবুও ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ের আইন বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পান এ শিক্ষক।
নূর নুসরাত সুলতানার আবেদনপত্র থেকে জানা যায়, তিনি ব্রিটেনের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে বিপিপি বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডন থেকে ৬৩.৩৩% নম্বর পেয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতকোত্তরে ৬৩.৩৩% মার্কসকে প্রথম শ্রেণী হিসেবে নিয়োগ বোর্ডে উল্লেখ করেন নূর নুসরাত। কিন্তু বিপিপি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রেডিং পলিসি অনুযায়ী ৬৩.৩৩% নম্বর দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়াও ইউজিসি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রেডিং পলিসি অনুযায়ী ৬৩.৩৩% নম্বরকে সিজিপিএ-৩ বা দ্বিতীয় শ্রেণী ধরা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নূর নুসরাত সুলতানা বলেন, বিদেশী ডিগ্রির ৬০% মার্কসে প্রথম শ্রেণী দেখিয়ে অনেকেই রাবিতে নিয়োগ পেয়েছেন। ৬০% মার্কস দেখিয়ে রাবির লোক প্রশাসন বিভাগে শাহরিয়ার স্যার নিয়োগ পান, পরে তিনি ঢাবিতেও জয়েন করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তারেক নূর স্যারও এভাবেই নিয়োগ পান। নর্থ আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান মাস্টার্সকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিনেন্সে এমফিলের পদমর্যাদা দেয়া হয়। বিদেশী ডিগ্রির গ্রেডিংয়ের ওপর বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। ৬০% মার্কসকে বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণী ধরা হয় এবং এভাবেই প্রথম শ্রেণী ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটকারী আইনজীবী নূরুল হুদা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি হলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা আদালত বাতিল করতে পারে। ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ের আইন বিভাগে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ইউজিসি তদন্ত কমিটি অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার প্রায় চার বছর হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো নূর নুসরাত সুলতানাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। যেটা খুবই হতাশাজনক। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউজিসির তদন্ত কমিটি কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কোনো প্রতিকার না পেয়ে আমি আইন বিভাগের ওই নিয়োগ বাতিলের জন্য রিট দায়ের করি। আমার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই নিয়োগ বাতিলের রুল জারি করেছে। এ বছরের শেষে ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানী হতে পারে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা