অকাল জন্মের শিশুরা অন্ধ হচ্ছে রেটিনোপ্যাথি প্রিম্যাচিউরিটির কারণে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪
মাতৃগর্ভে ৩৫ সপ্তাহ পূরণের আগেই যে শিশুগুলো জন্ম নেয় এবং যে শিশুগুলো ২ কেজির বেশি ওজন নিয়ে জন্মাতে পারে না এরা রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি (আরওপি) রোগে ভোগে এবং এটা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর জন্ম নেয়া ৩০ লাখের বেশি শিশুর মধ্যে ১২.৫ শতাংশ (প্রায় ৪ লাখ) শিশু অকালে জন্মগ্রহণ করে। আরওপি মোকাবেলার করার জন্য আগে অকাল প্রসব প্রতিরোধে মনোযোগ দিতে হবে। যেসব শিশু জন্ম নিয়েছে এদের প্রাথমিক অবস্থায় রোগ চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে বিরাজমান আটটি ডিজিটাল ইমেজিং যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।
গতকাল রোববার অরবিস ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘ন্যাশনাল আরওপি প্রোগ্রাম : অপশন অ্যান্ড অপারচুনিটিজ’ শীর্ষক সভায় অরবিসের গুলশান অফিসে এক পরামর্শ সভায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সচেতনতা ও সঠিক রেফারেলের অভাবে বাংলাদেশ কার্যকরভাবে আরওপি ব্যবস্থাপনা করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে এই রোগের ব্যবস্থাপনায় সফলতা আসবে না বলে সতর্ক করেন তারা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অকালে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের সময়মতো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয় না, ফলে শিশুরা চিকিৎসা না পেয়ে অন্ধ হয়ে যায়। এই শিশুরা যেখানে জন্ম নেয় বিশেষ করে উপজেলা অথবা অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত মেডিক্যাল স্টাফরা রেটিনাল ইমেজ পরীক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে এমন হাসপাতালে পাঠান না। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেসব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারির ব্যবস্থা আছে সেখানে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (নিকু) এবং বিশেষ যতœ নবজাতক ইউনিট (স্ক্যানু) রাখাটা বাধ্যতামূলক করতে হবে। নবজাতকদের স্বার্থে যেখানে এই দুই ব্যবস্থা আছে সেখানে রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি (আরওপি) পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ বা একজন নবজাতক বিশেষজ্ঞ অকালে জন্ম নেয়া শিশুর চিকিৎসা করার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকদের পরামর্শ দেন যে শিশুটিকে অবশ্যই আরওপি পরীক্ষা করাতে হবে। প্রেসক্রিপশনে পরামর্শই দিয়েই তাদের যথেষ্ট মনে করা উচিত নয়। তাদের নিশ্চিত করা উচিত যেন, মা-বাবা বা অভিভাবক যেন শিশুর ঝুঁকিটা ঠিকমতো বোঝেন এবং শিশুটিকে অবশ্যই পরীক্ষার ব্যবস্থা যেন করেন। বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকরা বলেন, ডাক্তার ও নার্সরা অকালে জন্ম নেয়া শিশুদের মা-বাবাকে সমস্যা সম্পর্কে জানালে অনেক সময় মা-বাবারা এটিকে হালকাভাবে নেন। চিকিৎসকদের উচিত সদ্যজাত শিশুটির অন্ধত্বের ঝুঁকির ওপর বেশি জোর দিয়ে মা-বাবাকে জানানো। জন্মের ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই আরওপি চিকিৎসা শুরু করতে পারে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যায়। আরওপিবিষয়ক বক্তব্য প্রদান করেন বিসিপিএস সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা: খায়ের আহমেদ চৌধুরী, ভিট্রিও রেটিনা বিভাগের অধ্যাপক ডা: নুজহাত চৌধুরী, শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো: মনির হোসেন ও অধ্যাপক মো: আব্দুল মান্নান, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: লায়লা আরজুমান্দ বানু, অরবিসের সহযোগী পরিচালক ডা: লুৎফুল হোসেন, ইউনিসেফের পরামর্শক ডা: জাহিদ হাসান প্রমুখ।