উপকূলে লবণের মাঠ তৈরিতে ব্যস্ত হাজার হাজার চাষি
- এস এম রহমান পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
- ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫
চলতি মৌসুমে (২০২৪-২৫) দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এই বিপুল পরিমাণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার জেলার হাজার হাজার চাষি উপকূলে লবণের মাঠ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে চলতি লবণ মৌসুমের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবের কারণে এবার আগাম লবণ উৎপাদন কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে।
গত মৌসুমে (২০২৩-২৪) লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হওয়ার অন্তত ১৮ দিন আগে ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় সর্বপ্রথম লবণ উৎপাদনে উপকূলের চাষিদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছিল। উপজেলার সনুয়ার মো: কলিম উদ্দিনের লবণ মাঠ থেকে ওই দিন মৌসুমের সর্বপ্রথম ২০ মণ লবণ উৎপাদন হয়েছিল।
প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের ১৫ মে পর্যন্ত ছয় মাস লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লবণের দাম বেশি পাওয়ার কারণেই চাষিরা গত বছর আগাম লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমেছিল বলে জানা গেছে। গত মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন। সে হিসাবে গত মৌসুমে ৯০ হাজার ১১০ টন লবণ উৎপাদন কম হয়। অথচ গতকাল পর্যন্ত মাঠে গত বছরের উৎপাদিত প্রায় পাঁচ লাখ টন অপরিশোধিত বা ক্রুড লবণ অবিক্রীত রয়ে গেছে। উৎপাদন মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ লবণ অবিক্রীত থাকায় চাষিরা চলতি মৌসুমে উৎপাদিত লবণের মূল্য নিয়ে কিছুটা সংশয়ে রয়েছেন।
বিপুল পরিমাণ লবণ মাঠে অবিক্রীত থাকার বিষয়ে গতকাল বিকেলে যোগাযোগ করা হলে বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, গত বছর লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। এর মধ্যে ভোজ্য খাতে ৮ লাখ ৭৮ হাজার টন, শিল্প খাতে ৮ লাখ ৩৭ হাজার টন, মৎস্য খাতে ০.৩৮ হাজার টন, প্রাণিসম্পদ খাতে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টনসহ পরিশোধিত লবণের চাহিদা ছিল মোট ২০ লাখ ৯৮ হাজার টন। অপর দিকে এই বিপুল পরিমাণ চাহিদার লবণ চাহিদা পরিশোধন করতে ১৭ ভাগ পরিশোধনসহ লবণের চাহিদা ধরা হয়েছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। চলমান পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প খাতে ১৫% লবণের প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও এ শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৫%। এ কারণেই মূলত শিল্প খাতের বিপুল পরিমাণ লবণ অব্যবহৃত থেকে যাওয়ায় মাঠে এই বিপুল পরিমাণ লবণ অবিক্রীত রয়ে গেছে।
জানা গেছে, এক সময় দেশে প্রতি বছর লাখ লাখ টন সোডিয়াম সালফেট আমদানি করত অসাধু ব্যবসায়ীরা। এর আড়ালে মিসডিকলারেশনের মাধ্যমেও লাখ লাখ টন লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) আমদানি করা হতো। সে কারণে দেশে লবণ উৎপাদন করে চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পেত না। এ নিয়ে নয়া দিগন্তে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে সরকার লবণশিল্প ও চাষিদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির ওপর শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯ শতাংশে নিয়ে আসে। এতে বাজারে আমদানিকৃত লবণের দাম বেশি হওয়ায় আমদানিকারকরা অতিরিক্ত লবণ আমদানিতে নিরুৎসাহী হয়ে পড়েন। এতে করে দেশে লবণশিল্পে প্রাণ ফিরে পায়। বিদেশ থেকে লবণ আমদানি শুল্ককর বৃদ্ধি করার কারণে আমদানি করা লবণের চেয়ে দেশে উৎপাদিত লবণের কদর বেড়ে যায়।
বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে উপকূলে এবার লবণ মাঠ তৈরি করতে চাষিদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এ কারণে চলতি মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পুরোদমে উপকূলে লবণ উৎপাদনের প্রত্যাশা করছেন তারা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা