২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পল্লবীতে গুলিতে গৃহবধূর মৃত্যু

আসামিদের হুমকিতে আতঙ্কে এলাকাবাসী, রিমান্ডে ২

-

রাজধানীর পল্লবীর বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদক কারবারি দু’টি গ্রুপের গোলাগুলিতে আয়েশা আক্তার (২৬) নিহতের ঘটনায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গত বুধবার পল্লবী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের স্বামী মিরাজুল ইসলাম। এ ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- আল মামুন ও মো: নাসির। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এ দিকে গুলির ঘটনার নেপথ্যের নায়ক আল মামুন ও তার সহযোগী মো: নাসিরকে গ্রেফতারের সংবাদে এলাকাবাসী উল্লাস করেছেন। তাদের আরেক সন্ত্রাসী আল ইসলামকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে থানায় জড়ো হন এলাকাবাসী। এ ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা মুখ না খুলতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসাীর অভিযোগ, আল ইসলামের ভাই জাহাঙ্গীরের হুমকিতে তারা বেশি আতঙ্কিত।

পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আদিল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি আল মামুন ছাড়াও মো: নাসির নামে তাদের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল তাদের দু’জনকে রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত তাদের দু’জনেরই দু’দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তিনি বলেন, গত বুধবার রাতে নিহতের স্বামী মিরাজুল ইসলাম বাদি হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- মমিন, শাবু, সম্রাট, শামিম, জয়নাল, পাতা সোহেল, কালা মোতালেব, ভাগ্নে মামুন, জাহাঙ্গীর, ভেজাল মামুন, আল-ইসলাম, ইউনুস ওরফে ডিস্কু, রুবেল, মজনু, কালন, কামাল ও জয়। মামলা দায়ের হওয়ার পরই সেনাবাহিনীর সহায়তায় আল মামুন ও নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, মামলার আসামিরা পল্লবীর শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান মামুনের (ভারতে অবস্থানরত) অস্ত্রধারী ক্যাডার। তাদের মধ্যে ১ নম্বর আসামি মমিন হচ্ছে মামুনের চাচাতো ভাই এবং রুবেলের বোন জামাই। গ্রেফতারকৃত ১১ নম্বর আসামি আল ইসলাম ও ৯ নম্বর আসামি আল ইসলামের ভাই জাহাঙ্গীর নেপথ্যে থেকে দখল ও মাদক ব্যবসার আধিপত্যের লড়াই জিইয়ে রেখে চাঁদাবাজি করে আসছিল।
পল্লবী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পল্লবী থানাধীন মিরপুর সেকশন-১১ এর বাউনিয়া বাঁধ বি-ব্লকে চিহ্নিত অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী মমিন, শাবু, সম্রাট, শামিম, জয়নাল, ইদ্রিস, কালা মোতালেব, কামাল, জাহাঙ্গীর, আল ইসলাম, ভেজাল মামুন, জয়, ইউনুস, রুবেলসহ অজ্ঞাত ১৪-১৫ জন এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ফতের ভাই মামুনের কাছে চাঁদা চায়। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি ও তর্কের মধ্যে থেকে একপর্যায়ে গোলাগুলি হয়। তাতে বাউনিয়া বাঁধ বি ব্লকের ১৭/১৮ বাসার দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির করিডোরে দাঁড়ানো আয়েশা আক্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। ওই বাসার তৃতীয়তলায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে ১০ বছর ধরে স্বামীর সাথে বসবাস করে আসছিলেন আয়েশা আক্তার।

থানা সূত্র আরো জানায়, পল্লবীতে চাঁদাবাজি, মাদক কারবার আর দখল মানেই আল ইসলাম। নিরীহ কারো জমি কেনার তথ্য পেলেই হাজির হতো আল ইসলাম ও তার ভাই জাহাঙ্গীরের লোকজন। নগদ চাঁদাবাজিতে সিদ্ধহস্ত দুই ভাই চাঁদা না পেলে হামলা করতেন, কখনো সাঙ্গোপাঙ্গর মাধ্যমে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন দিনের পর দিন। বাধ্য হয়ে অনেকে জমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হতেন। মাদক কারবারে জড়িত আল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা, হামলা, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে অন্তত ডজনখানেক মামলা। ৫ আগস্টের পর রাতারাতি ভোল পাল্টে পল্লবীর আতঙ্কের নাম হয়েছেন দুই সহোদর।
মিনহাজ নামে স্থানীয় এক বাড়ির মালিক জানান, আল ইসলাম গ্রেফতারের কারণে এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি নামার কথা। কিন্তু বিপরীত বেড়েছে আতঙ্ক। যারা বিভিন্ন সময়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা বা প্রতিবাদ করেছেন, তারা যেন আল ইসলাম গ্রেফতারের খবরে উল্লাস না করে সেজন্য গ্রুপের সাঙ্গোপাঙ্গদের দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। আগের মতোই সব কিছু চলবে বলে হুমকি দিয়েছে জাহাঙ্গীর। বলেছেন, বাড়াবাড়ি করলে হাত-পা ভেঙে হত্যা করবেন।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অন্য জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement