৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

পুলিশের গতি বাড়াতে ভারত থেকে আনা গাড়িগুলো নিম্নমানের

পুলিশের গতি বাড়াতে ভারত থেকে আনা গাড়িগুলো নিম্নমানের -

- ২ চালানে পৌঁছেছে ৩০টি
- পুলিশ বলেছে মূল্য ও সময় বাঁচাতে কেনা হয়েছে ভারত থেকে

ঢাকা মেট্রোপলিটন পলিশ ডিএমপির থানাগুলোর কার্যক্রমে গতি আনতে ভারত থেকে আনা হচ্ছে ৫০টি গাড়ি। ইতোমধ্যে দুই চালানে ৩০টি গাড়ি এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ১০টি গাড়ি থানায় হস্তান্তরও করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বাকি ২০টি গাড়িও অন্যান্য থানায় হস্তান্তর করা হবে।
তবে অভিযোগ উঠেছে ভারতের মাহেন্দ্রা কোম্পানির এই গাড়িগুলো খুবই নিম্নমানের। আগে যেখানে বিশ্বখ্যাত জাপানের তৈরি টয়োটা, মিতসুবিসি, নিশান কোম্পানির বিভিন্ন মডেলের গাড়ি আমদানি করা হতো। এখন সেখানে আনা হচ্ছে ভারতের মাহিন্দ্রা কোম্পানির বেলোরোর মডেলের গাড়ি। এর সাথে রয়েছে ইনুজু ডি ম্যাস্ক। যা আগের আনা গাড়িগুলোর তুলনায় অনেক নিম্নমানের। এই গাড়িগুলো ব্যবহার করে বর্তমান সময়ের আপডেট অপরাধীদের ধরা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ভারতের মাহিন্দ্রা বোলেরো ও ইসুজু,ডি ম্যাস্ক জাপান থেকে আনা গাড়ির তুলনায় খুবই নিম্নমানের হওয়ায় এর পারফরম্যান্সে হতাশা প্রকাশ করেছেন খোদ পুলিশ সদস্যরা। তাদের অভিযোগ গাড়িগুলো অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া এর মেনটেন্যান্স খরচও বেশি। এই নিম্নমানের গাড়ি দিয়ে পুলিশের কাজে গতিশীলতা আনা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন পুলিশের ভিতরের অনেকেই।
এই গাড়ি ব্যবহারকারী একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে অপরাধীরা অনেক বেশি আপডেট। তারা অপরাধ ঘটিয়ে দ্রুত সময়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো ভেহিক্যাল ব্যবহার করে থাকে। বেশির ভাগ অপরাধীর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলগুলো দেড় শ’ সিসির ওপরে। আর যারা গাড়ি ব্যবহার করে অপরাধ করে সেই গাড়িগুলোর মানও অনেক উন্নত। যা ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত করে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। ওইসব অপরাধীদের ধরতে হলে পুলিশের গাড়ির মানও ভালো হওয়া প্রয়োজন। তার মতে, পুলিশের গাড়ি থাকাটাই যথেষ্ট নয়। অপরাধীদের চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে তাদের সাথে পাল্লা দিয়েই হওয়া উচিত পুলিশের ভেহিকেলগুলো।

অপর এক কর্মকর্তা বলেন, এসব নিম্নমানের গাড়ি দিয়ে ভিআইপি ডিউটি দিতে গেলেও বিব্রত হতে হয়। কারণ ভিআইপিরা খুবই উন্নতমানের গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন। সেখানে তাদের পেছনে ও সামনে থাকতে গেলে আমাদেরও উন্নত গাড়ি প্রয়োজন হয়। পুলিশের ধীরগতির গাড়ির কারণে অনেক ভিআইপি প্রটোকল বাদ দিয়ে আগে চলে যান। তখন খুবই বিব্রত হতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানায় ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী গাড়িও চলছে। লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলোর ফিটনেস মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে আগেই।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর প্রায় দুই কোটি বাসিন্দার নিরাপত্তায় ৫০টি থানায় বরাদ্দ গাড়ির সংখ্যা ৩৫৭টি। তবে অন্যান্য অফিসসহ সব মিলিয়ে এই মহানগরে পুলিশের গাড়ির সংখ্যা এক হাজার ৫৫৩টি। এর মধ্যে রয়েছে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, রেকার, প্রিজনভ্যান, আর্মার পুলিশ ক্যারিয়ার (এপিসি), লাশবাহী ভ্যান ইত্যাদি। এসব গাড়ির মধ্যে ৫ আগস্টের আগেই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ১১৫টি। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যার মধ্যে ডিএমপির ১৮৬টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৯৭টি গাড়ি একেবারেই পুড়ে যায়। যা মেরামত করেও চালানো সম্ভব নয়। এদিকে টহল কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালাতে প্রতিটি থানায় গাড়ির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই ডিএমপি কমিশনারের ঐকান্তিক চেষ্টায় ভারত থেকে ৫০টি গাড়ি কেনার চুক্তি করা হয়।

পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, গত তিন অর্থবছরে এক হাজার ১৭টি যানবাহন কেনা হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলই ৬৬৫টি। সব মিলিয়ে পুলিশের গাড়ি আছে ১১ হাজার ৯২৩টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ছয় হাজার ৪৪৫টি। বাকি পাঁচ হাজার ৪৭৮টি যানবাহন দিয়ে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো: শওকত আলী নয়া দিগন্তকে বলেন, ভারত থেকে ৫০টি গাড়ি কেনা হচ্ছে। যার ৩০টি গাড়ি ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। এর মধ্যে আগের চালানের ১০টি গাড়ি দশটি থানায় ভারত থেকে আনা প্রথম চালানের গাড়ি গত ৯ অক্টোবর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে ডিএমপির ১০টি থানায় (উত্তরা পূর্ব, গুলশান, তেজগাঁও, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মতিঝিল ও নিউমার্কেট থানায়) হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় চালানে আসা ২০টি হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ২০টিও চলে আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দামে সাশ্রয়ী এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে গাড়িগুলো হাতে পাওয়ার কথা চিন্তা করেই ভারত থেকে গাড়িগুলো আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ থানাগুলোতে গাড়ি খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। এখানে জাপানি গাড়ি আমদানির প্রসেসটা একটু লম্বা এবং দামও বেশি। যার কারণে অল্প সময়ে অল্প খরচের কথা চিন্তা করেই এই গাড়িগুলো কেনা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement