৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা

একদশকেও বাস্তবায়ন হয়নি ভিটামিন-এ সমৃদ্ধকরণ আইন

-


দেশের শিশু ও বয়স্কদের অসংক্রামক রোগমুক্ত এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজন ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল নিশ্চিত করা। কিন্তু গত ১০ বছরেও ভিটামিন ‘এ’ সম্মৃদ্ধকরণ আইন বাস্তবায়ন করা হয়নি। জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতিতে ভুগছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে শহর ও গ্রামের ২০ শতাংশ মানুষ রোগ ঝুঁকিতে আছে। এ ছাড়া সূর্যের আলো ও মাছ সহজলভ্য হলেও ১৮.৬ শতাংশ জেলে ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতিতে রয়েছে। বিশ্বে এই দু’টি ভিটামিনের অভাব নীরবে মহামারীর আকার ধারণ করছে। রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত ‘সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল : অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় গতকাল এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষঞ্জ ও আলোচকরা।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৭ সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা করেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: সোহেল রেজা চৌধুরী, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশনের (গেইন) লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন প্রোগ্রামের পোর্টফোলিও লিড আশেক মাহফুজ, চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র নিউজ এডিটর মীর মাসরুর জামান এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের। কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথের অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা: রীনা রানী পাল এবং প্রজ্ঞার কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা ও উপস্থাপনায় ছিলেন, লার্জ-স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন প্রজেক্ট, প্রজ্ঞার ফারহাত লামিসা।

উপস্থাপনায় বলা হয়, ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ বিবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতি রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এ ক্ষেত্রে ভোজ্যতেল ভিটামিন এ এবং ডি সমৃদ্ধকরণ হতে পারে সবচেয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ। এতে জনগণ প্রতিদিনের ভোজ্যতেলে একই সাথে ভিটামিন এ এবং ডি পাবে।
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ছাড়া ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ। কিন্তু ড্রামে বাজারজাতকৃত বেশির ভাগ ভোজ্যতেলই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ না হওয়ায় আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনসাধারণ। ড্রামের খোলা ভোজ্যতেলে ভেজাল মেশানোর সুযোগ থাকে।
ড্রামে কোনো ধরনের লেবেল এবং উৎস শনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত না করায় তেল সরবরাহের উৎস চিহ্নিত করা যায় না। ফলে দোষীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। জুলাই ২০২২ এরপর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার বলেন. অস্বচ্ছ মোড়কে ভোজ্যতেল পরিবেশন ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে আইনেই অনেক ফাঁকফোকড় আছে।
আর এসব ক্ষেত্রে যেসব অফিস আদেশ রয়েছে, তা-ও অনেক দুর্বল। তিনি বলেন, সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের জন্য দরকার উপযুক্ত প্যাকেজিং ব্যবস্থা।


আরো সংবাদ



premium cement