২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জেনেভা ক্যাম্পে অস্থিরতা

মাদক কারবারিদের গুলিতে প্রাণ গেল শিশু রহমতের

ছিনতাই-ডাকাতবিরোধী অভিযানে আরো ৩৪ জন গ্রেফতার
-


রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে গত শনিবার পরিবারের জন্য পাম্প থেকে পানি আনতে গিয়েছিল শিশু সাজ্জেন ওরফে রহমত (১৩)। ওই সময় মাদককারবারে জড়িত দুই গ্রুপের মধ্যে হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হয়। সেই শব্দে আতঙ্কিত হয়ে বাসায় ফিরছিল রহমত। একটু সামনে আসতেই ৮ নম্বর সেক্টরে দুই পক্ষের ছোড়া পাঁচটি গুলি রহমতের হাতে, বুকে ও পেটে বিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা তাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে মৃত্যু হয়েছে রহমতের।

খালাতো ভাই মো: মুরাদ হোসেন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এই মৃত্যুর দায় কে নেবে? রহমত কি অপরাধ করেছিল? মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীদের দ্বন্দ্বের বলি হয়েছে সে। যাদের কারণে ভাইয়ের প্রাণ গেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এই অনুরোধ করছি। তিনি আরো বলেন, গত শনিবার বিকেলে ক্যাম্পের ভেতর মাদককারবারি চুয়া সেলিম ও বুনিয়া সোহেল গ্রুপের গোলাগুলির সময় রহমত পাম্প থেকে খাবার পানি নিয়ে বাসায় ফিরছিল। তখন রহমতের শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। তাকে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে ঢামেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে মারা গেছে সে। নিহতের বাবা শমসের আলী জেনেভা ক্যাম্পের ৫ নম্বর সেক্টরে থাকেন।
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) তালেবুর রহমান বলেন, শিশুটির লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা করছে পুলিশ।

এদিকে মোহাম্মদপুরে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান মোহাম্মদপুর থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের মধ্যে শান্তি ও স্বস্তি ফেরাতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব একসঙ্গে কাজ করছে। মোহাম্মদপুর এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল, চেকপোস্ট, ব্লক রেড ও বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। গত রোববার রাতে শের শাহ সুরি সড়ক থেকে চাপাতিসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সামনে থেকে একটি ডাকাত দলের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন অভিযান চালানো হয়, তখন চিহ্নিত ও অভ্যাসগত অপরাধীর বাইরেও কেউ কেউ আটক হন। এ ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের পর নির্দোষ কাউকে পাওয়া গেলে তাকে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে যে বিষয়টি সামনে এসেছে, সেটি হলো মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করে গ্রেফতার অভিযান চলমান আছে। ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, এই মুহূর্তে সঠিক পরিসংখ্যান বলতে না পারলেও সংখ্যাটি অর্ধশতের বেশি।

 


আরো সংবাদ



premium cement