২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মূসক প্রত্যাহারের দাবি

সেন্টমার্টিন ও পার্বত্য অঞ্চলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চায় টোয়াব

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটকদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে টোয়াবের সংবাদ সম্মেলন : নয়া দিগন্ত -

সেন্টমার্টিন ও পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল এবং ট্যুর অপারেটর সেবায় ভ্যাট প্রত্যাহার চেয়েছে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় পর্যটনশিল্পের শীর্ষস্থানীয় এই বাণিজ্যিক সংগঠন।
সরকারের সেন্টমার্টিন বিষয়ক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এবং ট্যুর অপারেটর ও ট্যুরগাইড আইনের বিধিমালায় উল্লেখিত জামানত বাতিল ও বিভিন্ন অসঙ্গতি দূরীকরণ বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে টোয়াবের সভাপতি মো: রাফেউজ্জামান বলেন, আমাদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন ও পর্যটক যাতায়াত সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে কোনো পর্যটক রাত্রি যাপন করতে পারবেন না। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন এবং রাত্রি যাপন করতে পারবেন। আর ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্টমার্টিনে সরকার পর্যটক যাতায়াত বন্ধ রাখবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য।
তিনি বলেন, চলমান অবস্থায় পর্যটনশিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সাধারণ উদ্যোক্তারা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে। সেন্টমার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বাস করে জানিয়ে তিনি বলেন, এরা সবাই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। সেন্টমার্টিনে পর্যটন বন্ধ হলে এরা সবাই বেকার হয়ে যাবে। সেই সাথে উদ্যোক্তাদের আর্থিক বিনিয়োগ এখন ঝুঁকির মুখে পড়বে। শুধু তাই নয়, পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার কারণেও পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং উদ্যোক্তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ট্যুর অপারেটরদের নিবন্ধন সংক্রান্ত নতুন গেজেটে কিছু নিয়ম ও শর্তাবলি উল্লেখ করা হয়েছে, যা মেনে চলা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। গেজেটে উল্লেখিত বিধিনিষেধ ও নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিধিমালার বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, এতে দেখা যায় ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালনা) লাইসেন্স আবেদনের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা নিবন্ধন সনদ ফি, ১০ লাখ টাকা ব্যাংক স্থিতির সার্টিফিকেট ও তিন লাখ টাকা জামানত প্রদান করতে হবে, যা ট্যুর অপরেটরদের জন্য সম্ভব নয়। এতে করে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবে।
বিকাশমান পর্যটনশিল্পের স্বার্থে ট্যুর অপারেটরদের সেবার ওপর মূসক আরোপ রহিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ট্যুর অপারেটর সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূসক ধার্য করার ফলে প্যাকেজ মূল্য তথা ট্রাভেল কস্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে করে গোটা পর্যটনশিল্প বিশেষ করে অন্তর্গামী ও অভ্যন্তরীণ পর্যটন দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেহেতু পর্যটনশিল্প একটি ব্যাপক ও অনেকগুলো সেক্টরের সাথে সম্পৃক্ত, মূসক আরোপের ফলে অগ্রসরমান বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে টোয়াবের পক্ষ থেকে সেন্টমার্টিনে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধ করে রাত্রিযাপনসহ যাবতীয় বিধিনিষেধ ব্যতিরেকে পর্যটন চালু রাখা, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বিকল্প পথ তৈরি করা, ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালনা) লাইসেন্স ও নবায়ন ফি ও ব্যাংক স্থিতি কমানো ও জামানত বাতিল, ট্যুর অপারেটর সেবার ওপর মূসক প্রত্যাহার, সারা বছর সুন্দরবনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল চালু রাখা, পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও পর্যটকদের জন্য পারমিশন গ্রহণ সহজীকরণ করা ইত্যাদি দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টোয়াবের সদ্য সাবেক সভাপতি ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শিবলুল আাজম কোরেশী বলেন, পরিবেশসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পর্যটনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে টেকসই পর্যটন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি সেন্টমার্টিনে সাগরের পানি থেকে মিঠা পানিতে পরিণত করার নিমিত্তে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, পচনশীল বর্জ্য ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বায়োগ্যাসে পরিণত করার ব্যবস্থা গ্রহণ, জেনারেটরের ব্যবহার বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব সোলার প্লান্ট স্থাপন, ইট-বালু-সিমেন্ট-রড ইত্যাদি ব্যবহার করে স্থায়ী স্থাপনা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির সুপারিশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে টোয়াব পরিচালকবৃন্দ, ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্রিয়াব) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের নেতৃবৃন্দ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোটের নেতৃবৃন্দ, সেন্টমার্টিন দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, সেন্টমার্টিন হোটেল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বোট মালিক সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ, মৎস্যজীবী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ স্লিপার এসি বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কুয়াব)-এর নেতৃবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement