২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩০, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

হাইকোর্টে রিটে তদন্ত থামিয়ে আরো একধাপ পদোন্নতি!

-

হাইকোর্টে (উচ্চ আদালতে) রিট করে জাল সনদ ও জন্মনিবন্ধনে একসাথে দুই চাকরি তদন্ত আটকিয়ে রাখা চট্টগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়–য়াকে আরো একধাপ পদোন্নতি দিয়ে এবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ-কালকের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) তার এ পদোন্নতিপত্রে স্বাক্ষর করবেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে। তবে এর আগে পৃথক জেলায় দুই জন্মনিবন্ধন ও জাল সনদে একসাথে সরকারি দুই চাকরি, ভুয়া নাগরিকত্ব সৃষ্টি, সহকর্মীকে যৌন হয়রানি এবং জালজালিয়াতিতে একাধিক পদোন্নতির ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ তদন্ত কমিটি কার্যক্রম শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যেই উচ্চ আদালতে রিট করে তা আটকিয়ে দেন সুজন।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিভাগীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক পদে পদোন্নতি পেতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্ঘবব্ধ একটি সিন্ডিকেটর সাথে সুজন বড়–য়া পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন। সেই অনুযায়ী গোপনে তার পদোন্নতির আবেদনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফাইল প্রস্তুত করা হয় গত মাসখানেক আগে। খুবই গোপনে প্রস্তুতকৃত এ ফাইল বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসনের টেবিলে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পৃথক জেলায় দুই জন্মনিবন্ধন ও জাল সনদ দিয়ে একসাথে দুই সরকারি চাকরি নেয়া জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার দুর্নীতি ও অনিয়ম অনুসন্ধানে আবারো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাজমা আক্তারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার (সুজন বড়ুয়া) বিরুদ্ধে আবার নতুন করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এর মধ্যেই তিনি অন্যত্র বদলির আবেদন করেছেন। এতে তিনি জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরেছেন। এর আগে তার বিরুদ্ধে দুদক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বান্দরবান জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তদন্ত করেছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৪ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সুজন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তখনকার সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নানকে, যিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হলেও পরে উচ্চ আদালতের রিটে স্থগিত আদেশে তদন্তপ্রক্রিয়া আটকে যায়।
জানা যায়, নতুন করে তদন্ত শুরু হওয়ার পর অভিযুক্ত সুজন বড়ুয়া তার কর্মস্থল সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে বদলির জন্য তদবির করছেন। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে তিনি কক্সবাজার অথবা নোয়াখালীতে বদলি করার জন্য আবেদনে অনুরোধ করেন।
বদলিসংক্রান্ত আবেদনের বিষয়টি জানতে পেরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ আরো একাধিক কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনকালে সুজন বড়ুয়া দুর্নীতি, অনিয়ম, বদলি-বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন। এসব ঘটনার সঠিক তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলেন তারা।
দুদকের এক পুনঃঅনুসন্ধান প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ‘সুজন বড়–য়া’ ২০০৪ সালে ‘স্বাস্থ্য সহকারী’ পদে চাকরি নেন কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। এ সময় তিনি স্থায়ী ঠিকানা দেখান- কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা পালং গ্রাম। আর ওই গ্রামের-ই বিমল চন্দ্র বড়ুয়া ও প্রীতি রানী বড়–য়ার পুত্র তিনি। এ চাকরিতে থাকাবস্থাতেই ২০১২ সালে পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম বড়ুয়াপাড়ার ঠিকানায় জন্মনিবন্ধনসহ ভুয়া নাগরিত্ব সৃষ্টি করে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে আরেকটি চাকরি নেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ চাকরিতে যোগদানের কিছু দিনের মধ্যেই ভুয়া নাগরিকত্বে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চাকরি নেয়ার ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। শুরু হয় তদন্ত। এ সময় সুজন স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ (তাৎক্ষণিক বদলি) নিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে যান। নিজ বেতনে পদায়িত হন জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে। এর কিছুদিন পরই মারমা সম্প্রদায়ের এক নারী স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে ধর্ষণ চেষ্টায় বরখাস্ত হন তিনি। তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় বিভাগীয় মামলা। এসবকিছু আড়াল করে এবার তাৎক্ষণিক বদলিতে ফেনী পাড়ি দেন। সেখান থেকে নিজ-বেতনে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক পদে পদায়িত হয়ে চলে আসেন চট্টগ্রাস সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী ও আয়া শুরু থেকে শুরু করে সংস্থার সবার বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি বা সংযুক্তি নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। কব্জায় নেন টেন্ডার থেকে শুরু করে সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়–য়ার ক্ষমতায় চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে উঠেন স্বাস্থ্যের ত্রাস।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা: এ বি এম মো: হানিফকে একাধিকবার মুঠোফোন করা হলেও মোবাইল রিসিভ না করায় কোনো বক্তব্য মেলেনি। তবে তার দফতরের এ-ও টু জালাল আহমেদ বলেন, সুজন বড়–য়ার বদলি-পদোন্নতিসহ সব ফাইল আটকে গেছে। এ ফাইলটি মাসখানেক হলো জমা হয়। আপাতত সব কার্যক্র বন্ধ। এর চেয়ে বিস্তারিক কিছু জানতে চাইলে বলেন, স্যারের সাথে কথা বলতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল