২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ নেতার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়মের অভিযোগ

-


আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জমি দখল, বাল্যবিবাহ সম্পন্ন, অর্থ আত্মসাৎ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সন্ত্রাসী বলা সহ অর্ধশত দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিনের অনিয়ম যেন তার কাছে নিয়মে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে খ্যাত আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছে রাষ্ট্রের যেকোনো দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ হার মানায়। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার সাড়ে ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের এই নেতার সাথে ছিল কেরানীগঞ্জের শীর্ষ দুই ভূমিদস্যু সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা। এই ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ভাগিয়ে নিয়েছেন জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদ, জিনজিরা ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্ট্রির কাজির পদ ও জমির ব্যবসা। এসব পদ-পদবী ব্যবহার করে গত ১৫ বছরে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় দুর্নীতি ও অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করছেন। তার বিরুদ্ধে কাজী পেশায় থেকে বাল্যবিবাহ পড়ানো, ভূমি দখল, কলেজের অর্থ আত্মসাৎ, নারি কেলেঙ্কারি ও দলীয়করণসহ ৫০টিরও বেশি সুনির্দিষ্ট দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী ছাত্র ও অভিভাবকরা। এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য কেরানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুল হককে দায়িত্ব দিয়েছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রীনাত ফৌজিয়া।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের এই নেতার বিরুদ্ধে যে ৫০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি দায়িত্ব পালন করা, গোপালগঞ্জে শেখ মুজিবের কবরে ফুল দেয়া, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও আঞ্চলিকতা, বৈষম্যকরণ, বিভাজন সৃষ্টি করা, দায়িত্বে অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্য আচরণ, দলবাজি, একই সাথে লাভজনক প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে কাজী, কলেজের অধ্যক্ষ ও ভূমি ব্যবসায় জড়িত থাকা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে মিলাদের নামে ১০ লাখ ও বিদ্যুৎ খাতে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭১ টাকা আত্মসাৎ করা, বোর্ড পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ক্লাসের ফ্রি ও কোচিং ফি বাবদ অর্থ আত্মসাৎ করা, প্রশংসাপত্র প্রদানে অর্থ আদায় ও আত্মসাৎ, অফিস স্টেশনারি নামে কয়েক লাখ টাকা ও দুটি এসি আত্মসাৎ, নতুন জেনারেটর ক্রয়ের ভাউচার দেখিয়ে পুরান জেনারেটরকে ক্রয়, বিভিন্ন পরীক্ষা ও ভর্তির দায়িত্বে সম্মানী ভাতার টাকা আত্মসাৎ, অডিট রিপোর্টের জন্য শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ, কমিশন বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফরমের টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা রাখা, ছাত্রদের ভর্তি ও উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠান মেরামত ও প্যান্ডেল সাজানোর টাকা আত্মসাৎ, ২০২৩ সালে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিষয় কোড সংশোধনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও আত্মসাৎ, অতিরিক্ত ক্লাসের নামে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে আদায়, প্রি-টেস্ট পরীক্ষার পর আবার মডেল টেস্টের কথা বলে ৫০০ টাকা করে আদায়, ষষ্ঠ,অষ্টম ও নবম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশনে সরকার নির্ধারিত ফীর চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও টিসি দেয়ার হুমকি প্রদান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ভুল তথ্য প্রদান করা, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর এপিএস মই মামুনের বোনকে অবৈধ সুবিধা দেয়া, বিদ্যালয়ের জমির উপর প্রতিমন্ত্রীর এপিএসের রাস্তা নির্মাণ, বিদ্যালয়ের জমির মামলা দেখিয়ে আইনজীবীর নামে প্রতি মাসে ৪৫০০ টাকা আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানে না এসে বাসায় বসে সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের এসএসসি প্রোগ্রাম থেকে অর্থ আত্মসাৎসহ সুনির্দিষ্ট ৫০টি অভিযোগ। এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুল হককে দায়িত্ব দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রীণাত ফৌজিয়া।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট ৫০টির ও বেশি অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়াদিগন্ত প্রতিনিধিকে জানান, তিনি দুর্নীতি করেননি। তার অফিস কক্ষ যে সাড়ে ৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে তা শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাসের টাকা। তিনি বলেন, যেসব শিক্ষককে তিনি বিভিন্ন সময় অনিয়মের কারণে শাস্তি দিয়েছেন সেসব শিক্ষকের একটি অংশ তার বিরুদ্ধে ছাত্রদের ব্যবহার করছে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি থাকার কথা এবং গোপালগঞ্জে শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে পুষ্প অর্পণের কথা স্বীকার করেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
নয়া দিগন্তের মুক্তাগাছা সংবাদদাতা মুর্শেদ আলম লিটন আর নেই রাশিয়া রাতে ‘রেকর্ড’ সংখ্যক ড্রোন হামলা চালিয়েছে : ইউক্রেন আতঙ্ক নয়, পুলিশ হবে জনগণের ভরসা : জিএমপি কমিশনার হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে : উপদেষ্টা রাজশাহীতে সাবেক এমপি রায়হান গ্রেফতার পাবনায় পানিতে ডুবে ২ বছরের শিশুর মৃত্যু টেকনাফে বিজিবির অভিযানে আড়াই লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার চট্টগ্রামে আইনজীবী কুপিয়ে হত্যা করল চিন্ময়ের সমর্থকরা তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চট্টগ্রামে ইসকন সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ বিপুল পরিমাণে বিদেশী মুদ্রাসহ শাহ আমানতে যাত্রী আটক

সকল