সোনারগাঁওয়ে ক্লিনিকে নবজাতক বিক্রির অভিযোগে আটক ১

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মডার্ন ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নবজাতক চুরি করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার সকালে ওই নবজাতকের মা আকলিমা বেগম রাজিয়া বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ওই ক্লিনিকে ছেলে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়। এরপর ওই বাচ্চাটি আয়ার মাধ্যমে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। এ ঘটনায় সালমা বেগম নামে একজনকে আটক করেছে সোনারগাঁও থানা পুলিশ। পরে আটককৃতের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বৈদ্যেরবাজার হাড়িয়া এলাকায় পরিত্যক্ত ঝোপ থেকে গতকাল রোববার বিকেলে ওই নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সোনারগাঁও থানায় দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ থানার দৌলদিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। দৌলদিয়ায় বসবাস করার সুবাদে ওই এলাকায় যৌনকর্মী লক্ষ্মীর সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে লক্ষ্মীর সাথে রাজিয়ার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। রাজিয়ার গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে স্বামীর সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়। গর্ভের সন্তানের ভরণ পোষণ দেবে না বলে হুমকি দেয় স্বামী মিজান। এ বিষয়ে রাজবাড়ী আদালতে মামলা করা হয়। রাজিয়ার বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় হলে তার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। গত ৩ অক্টোবর লক্ষ্মী তাকে ফরিদপুর হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর কথা বলে বাসা থেকে নিয়ে আসে। পরে তাকে অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে রেখে লক্ষ্মী আত্মগোপনে চলে যায়। ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে পর দিন সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকে ভর্তি করে। সেখানে ১২দিন আটকে রাখার পর গত ১৪ অক্টোবর দুপুর দেড়টার দিকে জোরপূর্বক সিজার করানো হয়। সিজারে তার ছেলে হয়। কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে জানায় অসুস্থ। নবজাতককে আইসিইউতে ভর্তি রাখা হয়েছে বলে সময় পার করতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাচ্চা বিক্রি করে দিয়েছি বলে জানায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মডার্ন ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক রোগীদের এ ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও সিজার করানো হয়। এর আগেও এ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বাচ্চা চুরি করে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
নবজাতকের মা রাজিয়া আক্তার জানান, প্রতারণার মাধ্যমে তাকে এখানে আনা হয়েছে। তাকে জোরপূর্বক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিজার করিয়ে বাচ্চা বিক্রি করে দেন। তিনি বাচ্চাকে ফেরত পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
মডার্ন ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের পরিচালক মো: শহীদ মিয়া বলেন, বাচ্চাটি আয়া চুক্তি করে নিয়েছেন। তবে তিনি চুক্তির মাধ্যমে আয়াকে বাচ্চা দিতে পারেন কি না প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেননি।
সোনারগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, বাচ্চা চুরি করে বিক্রির অভিযোগ নেয়া হয়েছে। অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে ওই নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।