উদ্বোধনের অপেক্ষায় জেলা ও বিভাগীয় শহরে ৯ সরকারি স্কুলের শিক্ষাকার্যক্রম
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
- ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সুযোগ পাবে ১৭ হাজার শিক্ষার্থী
- শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিকদের শিশুরাও পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বিদ্যাপীঠ
স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার মূল স্রোতে নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ৯টি সরকারি স্কুল। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্কুলের অবকাঠামোর কাজ শেষ পর্যায়ে। দুটি স্কুলের একাডেমিক কার্যক্রম আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষে শুরুর অপেক্ষায়। বাকিগুলোর ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কয়েকটি ভবনের ফিনিশিংয়ের কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সবগুলো স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল ও জয়পুরহাট জেলায় দুটি ৬ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হওয়ায় এ দুটি স্কুলের একাডেমিক কার্যক্রমও আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকেই শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারি এই ৯টি স্কুলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ১৭ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পাবে।
সূত্রমতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ তদারকি করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। প্রকল্পের অধীনে রংপুর বিভাগীয় শহরে দুটি, রাজশাহী বিভাগীয় শহরে দুটি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে দুটি, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে একটি এবং জয়পুরহাট জেলা শহরে একটি এবং সিলেটের শ্রীমঙ্গল জেলা শহরে একটি সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এসব স্কুলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে। এই ৯টি স্কুলের মধ্যে শ্রীমঙ্গলের স্কুলটি শুধু চা শ্রমিকদের শিশুদের মূল শিক্ষা কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয় লোকেশনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এই স্কুলটি। শ্রীমঙ্গল চা বাগান অধ্যুষিত হওয়ায় এখানকার শিশুরা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল শিক্ষাবঞ্চিত। অবশ্য শিক্ষাকার্যক্রম চালু হওয়ার আগেই শুধু দৃষ্টিনন্দন স্কুল ভবন দেখেই সেখানকার শিশু এবং চা শ্রমিকদের মধ্যে শিক্ষা লাভের নতুন সম্ভাবনার আনন্দের বার্তা পৌঁছৈ গেছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জেলা পর্যায়ের অর্থাৎ শ্রীমঙ্গল ও জয়পুরহাটের স্কুল দুটি হয়েছে ৬ তলা ভবন। আর বিভাগীয় পর্যায়ের বাকি ৭টি স্কুল হবে ১০তলা ভবন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দুটি ভবনেরই ১০ তলার ছাদের ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। রাজশাহীর দুটি ভবনের প্রথমটি (ছোটবনগ্রাম মৌজার) চতুর্থ ছাদের ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে এবং রংপুরের দ্বিতীয় স্কুলের (উত্তম মৌজার) চতুর্থ ছাদের ঢালাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে এবং দ্বিতীয় স্কুলের ভবনের তৃতীয় ছাদের কাজও চলমান আছে। ময়মনসিংহের স্কুলটিরও তৃতীয় ছাদের ঢালাইয়ের কাজ চলমান। অপরদিকে রাজশাহীর দ্বিতীয় স্কুল ভবনের (বড়বনগ্রাম মৌজা) নির্মাণ কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিটি স্কুলের ভবনের নির্মাণ কাজের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের মাঠ তথা ভূমির উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, গেইট ও অভ্যন্তরীণ আরসিসি রাস্তা নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল ও জয়পুরহাট জেলার স্কুল দুটির ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় এখন সেখানে আসবাবপত্রও সরবরাহ করা হয়েছে। সর্বশেষ পর্যায়ে এখানে এখন অভ্যন্তরীণ ফিনিশিং তথা ইলেকট্রিফিকেশন, জেনারেটর ও লিফট স্থাপনের কাজ চলছে। এখন সুখবর হচ্ছে এই দুটি স্কুলে ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং শিগগিরই এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করে নতুন বছরে শিক্ষাকার্যক্রমও চালু করা যাবে।
সূত্র আরো জানায়, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নেই বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে এই ৯টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি গ্রহণের সময়ে প্রথম প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৩৫ কোটি টাকা। পরে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় (প্রথম সংশোধিত) ৪৬৪ কোটি টাকা। পরে আরো যাচাই বাছাইয়ের করে এই ব্যয় সঙ্কুচিক করে নির্ধারণ করা হয় (দ্বিতীয় সংশোধিত) ৪৪৬ কোটি টাকা। এসব স্কুলে পাঠদান সহায়ক আইসিটি সরঞ্জাম, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি, খেলাধুলার সামগ্রী ও আসবাবপত্রসহ সব ধরনের শিক্ষা উপকরণই থাকবে। পাঠদানের জন্য সবগুলো স্কুলেই আলাদা আলাদা পদ সৃষ্টি করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে মাউশি।
প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক রায়হানা তসলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিভিন্ন জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে আধুনিক সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার প্রবণতা কমবে, ঠিক একইভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকেও শিক্ষার মূল স্রোতে শামিল করা যাবে। তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গলের চা বাগান এলাকায় চা শ্রমিক অধ্যুষিত লোকালয়ে যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেখানে মূলত পিছিয়ে পড়া চা শ্রমিকদের সন্তানদের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর এই স্কুলটির অবস্থান ও নির্মাণ শৈলিতেও বেশ বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। শিশুদের শিক্ষা লাভের পাশাপাশি এখানে বিনোদনেরও পর্যাপ্ত সুযোগ রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা