২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মিরপুরে মাদরাসার বিরোধ নিয়ে অস্থিরতা, শিক্ষার্থীরা উৎকণ্ঠায়

-


রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত একটি মাদরাসায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কেন্দ্র করে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার নিয়ে বর্তমান মুহতামিমের সাথে বিরোধ নিয়ে শুরু হয় এ অস্থিরতা। এক পর্যায়ে সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে হামলার ঘটনাও ঘটে।
রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বরের পল্লবীর ধ ব্লকে অবস্থিত দারুল কোরআন মাদরাসা। এলাকাবাসীসহ মাদরাসার শিক্ষকদের বেশির ভাগেরই প্রত্যাশা এখানে উচ্চশিক্ষার স্তর বাড়ানো। কিন্তু তাতে বাধা মাদরাসাটির মুহতামিম (অধ্যক্ষ) হাফেজ ইলিয়াস। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মাদরাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষক মাওলানা আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে স্পর্শকাতর অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন। মূলত নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বল্পতার কারণে মাদরাসায় মুহতামিম হিসেবে থাকতে পারবেন না, এমন শঙ্কা থেকে তিনি এমনটি করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুধু তাই নয়, কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে না পেরে মুহতামিম স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় নেন। স্থানীয় নেতা ও তার অনুসারীরা সম্প্রতি মাওলানা আরিফুল ইসলামকে মারধর করে। এখন তারা ওই শিক্ষককে মাদরাসা থেকে বের করে দিতে মরিয়া।
এরই জেরে গত ১৫ অক্টোবর দুপুর ২টায় অধ্যক্ষ ইলিয়াছ একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা বাবুল, মিটার সেলিম ও সহযোগী মুরাদসহ তাদের আনুমানিক ২০-৩০ জনকে নিয়ে মসজিদ মাদরাসার অফিসে হামলা চালায়। সেখানে কিতাব বিভাগের প্রধান মাওলানা আরিফকে জোর করে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় তাকে টানা হেঁচড়া করে বাইরে নিয়ে আসা হয়।

মাদরাসায় সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ এবং ইতিপূর্বে শিক্ষককে সন্ত্রাসী কর্তৃক মারধরের ঘটনা ছাত্রদের মাঝে ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে দেয়। যার প্রেক্ষিতে তারা অধ্যক্ষের অপসারণ এবং শাস্তি দাবি করে মাদরাসা কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মুহতামিমের যোগসাজশে এসব ঘটনার পিছনে একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা গোলাম কিবরিয়া, স্থানীয় নেতা মিটার সেলিম, তার অনুসারী নিশার, রাজন, নাজমুলসহ কয়েকজন জড়িত। যদিও অভিযুক্তরা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মাদরাসা-সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটিতে শুরু থেকেই হাফেজি চলমান আছে। এলাকাবাসীসহ মাদরাসা-সংশ্লিষ্টরা চাচ্ছিলেন এর শিক্ষার স্তর মাওলানা স্তর পর্যন্ত করতে। যে কারণে ২০২১ সালে মাদরাসাটিতে মাওলানা স্তর বা কিতাব বিভাগ চালু হয়। হাফেজ থেকে মাওলানা স্তরে পৌঁছাতে ৮ বছরের মতো সময় লাগে। এখন সেখানে তৃতীয় বছরের পাঠদান চলছে।
মাদরাসা-সূত্র জানিয়েছে, এলাকাবাসী ও মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের চাওয়ার কারণে মুহতামিম হাফেজ ইলিয়াস প্রথমে এখানে মাওলানা স্তর চালুতে বাধা দেননি। কিন্তু প্রথমে বিষয়টি নিয়ে মুহতামিম কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও পরে কয়েকজন শিক্ষকের বিপক্ষে দাঁড়ান।
এ জন্য মুহতামিম প্রথমে মাদরাসার শিক্ষক মুয়াজ বিন কাসেমকে দিয়ে মাওলানা আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের একটি অভিযোগ দাখিল করেন। সেই অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি। এরপর মাহবুব এলাহী নামক একজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে বলাৎকারের মতো স্পর্শকাতর অভিযোগ তোলেন। কিন্তু সেটিও প্রমাণ করতে পারেননি মুহতামিম।

তবে সম্প্রতি মুহতামিম আবার বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এবার তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের শরণাপন্ন হন। নেতা মিটার সেলিম তার অনুসারী নিয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে মাদরাসায় গিয়ে মাওলানা আরিফুল ইসলামের ওপর হামলা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই শিক্ষক মাদরাসা না ছাড়লে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১১টার দিকে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা দেখছিলাম। এ সময় দরজায় কয়েকজন ধাক্কা দেয়। দরজা খুলে দিলে তারা ভেতরে ঢুকে আমাকে আঘাত করে। পরে ছাত্ররা উপস্থিত হলে তারা চলে যায়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মুহতামিম হাফেজ ইলিয়াস বলেন, আমিই কিতাব বিভাগ মাদরাসায় খুলেছি। কাজেই বিরোধিতার কোনো প্রশ্নই আসে না। এগুলো মিথ্যা অভিযোগ।
জানতে চাইলে মিটার সেলিম বলেন, মাদরাসায় ঝামেলা চলছে শুনে আমরা সেখানে যাই। কিন্তু কাউকে মারধর করা হয়নি। আমরা পরে চলে এসেছি। এ বিষয়ে গোলাম কিবরিয়ার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement