সিলেটে আইন কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক : বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি
- সিলেট ব্যুরো
- ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০৫
দুই মাসেরও অধিক সময় পর শূন্য থাকা সিলেটের বিভিন্ন আদালতের জিপি-পিপিসহ শতাধিক আইন কর্মকর্তার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। গত বুধবার আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসলিসিটর (জিপি-পিপি) সানা মো: মাহরুফ হোসাইন স্বাক্ষরিত এক আদেশে সিলেট আদালতের জিপি, পিপি, এডিশনাল পিপি ও এপিপি পদে সরকারি শতাধিক আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়।
এদিকে সিলেটের আদালতের শীর্ষ জিপি ও পিপি পদে দুই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ও সুযোগ-সন্ধানী এবং আইনকর্মকর্তার বিভিন্ন পদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতাকারী ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়োগ নিয়ে সিলেটজুড়ে বিতর্ক চলছে। এমনকি প্রকাশিত তালিকা বাতিলের দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপিপন্থী আইনজীবীগণ বিক্ষোভ করেছেন। এ ছাড়া জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা বরাবরে দেয়া হয়েছে স্মারকলিপি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিবাদ সমাবেশ
সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নিয়োগপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ফয়েজকে প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেটের নেতৃবৃন্দ। গতকাল দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ফোরামের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন আশুকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুল আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট এ টি এম ফয়েজ একজন বহুরূপী ও বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিএনপিতে আসলেও বিগত খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দীর্ঘ আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। দলে তার সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা, অনুপস্থিতি ও দলীয় নেতাকর্মীদের আইনি সেবা প্রদানে তার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে এক সময় আইনজীবী ফোরামের সভাপতির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। তিনি দীর্ঘ দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রান্ট হয়ে সপরিবারে স্থায়ীভাবে আমেরিকায় পাড়ি জমান। গত ৫ আগস্টের খুনি হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে তিনি পি পি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেন এবং সংশ্লিষ্টদেরকে ভুল বুঝিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদটি বাগিয়ে নেন, যা সিলেটের আইন অঙ্গনের সর্বস্তরের আইনজীবীদের মর্মাহত করেছে। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটওয়ারী রিপন, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবু তাহের, জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইদ আহমদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট এজাজ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আল আসলাম মুমিন, অ্যাডভোকেট উবাদুর রহমান ফাহমি, অ্যাডভোকেট শাহজান সিদ্দিকি, অ্যাডভোকেট আয়েশা সিদ্দিকা, অ্যাডভোকেট তানভীর আক্তার খান, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি, অ্যাডভোকেট আলী হায়দার ফারুক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের স্মারকলিপি
সিলেটের জেলা ও মহানগর আদালতসমূহের পিপি-জিপিসহ প্রকাশিত বিতর্কিত তালিকা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের নেতারা। প্রকাশিত তালিকা বাতিলের দাবিতে আইন উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। গতকাল বিকেলে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: শামছুল হক, বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট আলিম উদ্দিন, ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: আব্দুল খালিক, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন শামীম, অ্যাডভোকেট মাশহুদ আহমদ মহসিন, অ্যাডভোকেট আফজল মিয়া তালুকদার, অ্যাডভোকেট জুনেদ আহমদ, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে নেতারা বলেন, আদালতে জিপি হিসেবে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এবং পিপি হিসেবে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছি তিনিও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এমনকি বিগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তিনি প্রবাসে ছিলেন। এ ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তাদের তালিকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিরোধী এবং ফ্যাসিবাদের দোসররাও স্থান পেয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক। আদালতের পরিবেশ ও সুষ্ঠু বিচারকার্য পরিচালনার স্বার্থে উক্ত পিপি ও জিপি তালিকা বাতিল করে আইন পেশায় সৎ, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন তালিকা প্রকাশের জোর দাবি জানান তারা। এ দিকে নিয়োগপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তাদের মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতাকারী এবং নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বিতর্কিত একাধিক আইনজীবী স্থান পেয়েছেন বলে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী সরকারের পতনের প্রায় আড়াই মাস সিলেটের বিভিন্ন আদালতে শতাধিক আইন কর্মকর্তার পদ শূন্য ছিল। ফলে এ সময়ে ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। এতে সিলেট জেলা ও মহানগরের আদালতসমূহে লাখের মতো চলমান মামলা নিষ্পত্তিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় এবং বিলম্বিত হচ্ছিল বিচার কার্যক্রম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা