২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সিলেটে ‘চিনিকাণ্ডে’ বিক্ষুব্ধ তারেক রহমান

জিরো টলারেন্স নীতির বার্তা
-

সিলেট সীমান্তজুড়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ভারতীয় চিনি দেশে ঢুকছে। সিলেট থেকে শত শত ট্রাকে করে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় চালান হচ্ছে শত শত কোটি কোটি টাকার লাখ লাখ চিনির বস্তা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বলছে, তাদের কঠোর অবস্থান রয়েছে সীমান্তে। মাঝে মধ্যে চিনির চালান ধরাও পড়ছে। কিন্তু তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে চিনিবোঝাই বড় বড় ট্রাক সিলেট হয়ে দেদার আশপাশের সড়ক ও নদীপথে চলে যাচ্ছে দেশের নানা গন্তব্যে।
এই চোরাই ‘চিনিকাণ্ড’ এখন সিলেটে টক অব দ্য টাউন। চোরাচালানে চিনির আনাগোনা ও ছিনতাইয়ের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন স্থানীয় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। ইতোমধ্যে কয়েকজন বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে ধরা পড়ে জেলেও ঢুকেছেন। এ ধরনের অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ায় নেতাকর্মীদের কয়েকজনকে স্থায়ীভাবে, কাউকে কাউকে সাময়িকভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নেতিবাচক এই খবরে দলের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই খবর লন্ডনে পৌঁছানোয় চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলের হাই কমান্ড।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকীর। নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিলেটের চিনিকাণ্ড নিয়ে তার সাথে কথা বলেছেন। তারেক রহমান কোনো অন্যায়কারীকেই দলে প্রশ্রয় না দেয়ার কঠোর কঠোর বার্তা পাঠিয়েছেন সিলেটের নেতাদের কাছে। জড়িতদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। আমরাও প্রমাণ পাওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মাথায় দলের দুটো ওয়ার্ডের নির্বাচিত দুই নেতাকে বহিষ্কার করেছি। এসব চোরাচালান বন্ধে বিজিবি ও প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। তা না হলে এটা বন্ধ করা কঠিন হবে।

সিলেটে গত রোববার (১৩ অক্টোবর) রাতে চোরাই চিনিকাণ্ডে জড়িত সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা সোনালী-২২ বাসার মৃত দিলু মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান (৪৩) এবং সিসিকের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ভার্থখলা রুপালি আবাসিক এলাকার ৪৫ নম্বর বাসার মৃত ছানা মিয়ার ছেলে মো: সুলেমান হোসেন সুমনকে (৪২) স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে দল। সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তাদের স্থায়ী বহিষ্কারা করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করে চিনি চোরাচালানিতে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সবপর্যায়ের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে আবদুল মান্নান ও মো: সোলেমান হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের ক্ষেত্রে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছি। কারো দ্বারা দলের সুনাম ক্ষুণœ হলে আমরা বরদাশত করব না। তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সিলেট জেলা ইউনিটের আওতাধীন জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ ও পৌর বিএনপি নেতা সুলতান আহমদকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সবপর্যায়ের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সিলেট জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়। এতে বলা হয়, জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement