রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ এমদাদুলকে নিয়ে অস্বস্তি, বাড়ছে ক্ষোভ
- রাজশাহী ব্যুরো
- ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:৪৬
বিদেশী ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এস এম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক, প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরসহ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর। তবে এত কিছুর পরও এখন পর্যন্ত প্রতিকার মেলেনি। এ অবস্থায় অধ্যক্ষকে নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে।
এ অবস্থায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ এমদাদুল এই বলে দম্ভোক্তি প্রকাশ করেছেন যে, কেউ-ই তার কিছু করতে পারবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাপ সৃষ্টি করে একাধিক কোর্সে ভর্তি করিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়া এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির চলতি বছরের কোরিয়ান ভাষা ব্যাচের (মে-আগস্ট) শিক্ষার্থীরা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিদেশ গমনেচ্ছুদের মধ্যে যারা শুধু কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হতে চান তাদেরকে শর্তজুড়ে দিয়ে বলা হয়, এতে ভর্তি হতে হলে কার্পেন্ট্রি কোর্স করা বাধ্যতামূলক। তবে নিয়মানুযায়ী এটা বাধ্যতামূলক নয়। ফলে যেখানে মাত্র এক হাজার টাকায় কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়, সেখানে তাদের অতিরিক্ত আরো সাড়ে তিন হাজার গুনতে হচ্ছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, রাজশাহী টিটিসিতে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন করে শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে লটারির মাধ্যমে ৩০ জন এবং বাকি ২০ জন অধ্যক্ষের রেফারেন্সের (সুপারিশ) মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পান। ফলে গরীব শিক্ষার্থীরা এখানে প্রশিক্ষণ নেয়া থেকে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হন। আর এভাবে একটি ব্যাচ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোট এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। যে টাকার কোনো হিসাব নেই। ১৯ থেকে ২৩তম ব্যাচ পযর্ন্ত অধ্যক্ষ এভাবে দুর্নীতি করে আসছেন।
এ ছাড়া কার্পেন্ট্রি ক্লাস করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দেখতে পান, প্রশিক্ষণের জন্য ভালো কাঠের ব্যবস্থা করা হয়নি। আগের ব্যবহার করা ছোট কাঠের টুকরো দিয়ে পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীরা কাজ করেন। এ ছাড়া কাঠের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো অনেক পুরনো। আবার যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তার কিছু ক্ষেত্রে কোরিয়ার বাস্তব কাজের সাথে কোনো মিল নেই।
এ ছাড়া অটোমেকানিক্স ট্রেডে এসইআইপি প্রজেক্ট এবং দেশ-বিদেশে ড্রাইভিং প্রজেক্টের অধীনে ফ্রি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কোর্সেও ড্রাইভিংয়ের লেভেল-১ বা লেভেল সার্টিফিকেট দেয়ার নামে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা নেয়া হয়। কেউ যদি বলেন লেভেল করব না, শুধু ফ্রি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ করব তখন তাকে ভাইবাতেই বাদ দেয়া হয়। অর্থাৎ কেউ টাকা দিতে না পারলে তাকে ড্রাইভিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয় না। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নামে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা উৎকোচ নেয়া হয়। এভাবে অধ্যক্ষের যোগসাজশে বিভিন্ন কোর্সে অনিয়ম ও দুর্নীত করা হয়।
এ দিকে প্রশিক্ষণার্থীরা জানান, মোট পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়েছে। তবে তাদের আন্দোলনের মুখে একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিলেও বাকি চার ব্যাচের শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেননি অধ্যক্ষ।
এ দিকে প্রতারণা মামলায় অধ্যক্ষের আসামি হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহী সিআইডির পরিদর্শক আনিসুর রহমান বলেন, এজাহারে প্রথমে আসামি ছিলেন দুইজন। পরে ঘটনাটি তদন্তকালে টিটিসি অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এস এম এমদাদুল হক ও ইনস্ট্রাকটর আইউব উল আজাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অধ্যক্ষ এস এম এমদাদুল হকসহ মোট চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। মামলার বাদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার বাসুদেবপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এস এম এমদাদুল হক বলেন, কোনো মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনি আদালত। আর যাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে তারা চাইলে ফেরত নিতে পারবে।