২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শরীফের সম্পদ আত্মসাৎ ও নির্যাতনের প্রতিকার প্রার্থনা বড় ভাই তৈয়ব আলীর

-


বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র হত্যার দায়ে গ্রেফতারকৃত উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের শরীফ হোসেনের বিরুদ্ধে এবার সম্পদ আত্মসাৎ ও জুলুম নির্যাতনের ঘটনার প্রতিকার চেয়েছেন তার আপন বড় ভাই হাজী তৈয়ব আলী মোল্লা।
ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার ডিসি (উত্তর বিভাগ) বরাবর দেয়া অভিযোগে হাজী তৈয়ব আলী বলেছেন, তার বিদেশে ২৭ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে অর্জিত স্বপ্ন ধ্বংস করেছে ভাই শরীফ হোসেন। শরীফ তার বাহিনী দিয়ে, তাকে, পরিবারকে, তার মেয়েকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। জালিয়াতির মাধ্যমে তার জমি ও বাড়িঘর দখল করে নিয়েছে।

তৈয়ব আলী উল্লেখ করেন, তিনি কুয়েতে মাত্র ৭০ দিনার বেতনে চাকরিকালীন আর্থিক অনটনের মধ্যেও ছোট ভাই শরীফ মিয়াকে এম.এ. পাস করান। আশা ছিল বৃদ্ধ বয়সে তিনি ভাইয়ের সহযোগিতা পাবেন।
তৈয়ব আলী তার আর্জিতে বলেন, কুয়েতের চাকরি ছেড়ে আসার সময় সার্ভিস বেনিফিট বাবদ পাওয়া চার লাখ টাকা তিনি একত্রে পান এবং সেই টাকা দিয়ে দুই কাঠা জমিতে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে তিনতলা বাড়ি করেন। পরে শরীফ মিয়া প্রস্তাব দেয়, আমার জমি দিলে সে সবার জন্য ফ্ল্যাট বানাইয়া দিবে, সব ভাইদের কথা চিন্তা করে আমি রাজি হই। তবে চুক্তিনামাতে শর্ত থাকে, যে, ডেভেলপার হিসেবে তিন কাঠা জমির সাইন মানি ১৮ লাখ টাকা আমাকে না দিয়ে এর বিনিময়ে, ফ্ল্যাটের অর্ধেক হবে আমার আর বাকি অর্ধেক তার। আমাকে অন্যত্র ভাড়া থাকার জন্য সে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেয়। এখানে আরো শর্ত থাকে যে, তিন বছরের মধ্যে আমার ফ্ল্যাটের কাজ করে দিলে, আমি তাকে অর্ধেক জমি হেবা করে দিব কিন্তু সে ফ্ল্যাটের অর্ধেক করে বাকি কাজ ফেলে রেখে নরসিংদীতে তার শ্বশুরবাড়িতে কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি বানায়, আমার ফ্ল্যাট সমাপ্ত করতে দশ বছর সময় লাগায়। এতে ৫০-৬০ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে আর্থিক অনটনে আমি বাধ্য হয়ে চাপে পড়ে তার নামে অর্ধেকের বেশি জমি হেবা করে দেই, তারপর সে ফ্ল্যাটের কাজ শেষ করে। তৈয়ব আলী বলেন, এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করায় ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর শরীফ তার বাহিনী দিয়ে, আমাকে ও আমার মেয়েকে রাস্তায় ভাঙা ইটের ওপরে ফেলে মারধর করে। এরপর আমার হার্ট অ্যাটাক হয়, পেটে দু’টি পাথর ধরা পড়ে, চোখে আঘাত করাতে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। তখন থানাতে একটি জিডি করি, যার নম্বর ১৪০১, তারিখ ২২/১০/২০১৭ইং।

তৈয়বের অভিযোগে বলা হয়, শরীফ তার ক্ষমতা দেখানোর জন্য বিভিন্ন সময় সাবেক এমপি ও মন্ত্রী সাহারা খাতুনকে দাওয়াত করে বাড়িতে আনতো। পরে এমপি হাবীব হাসানকে দাওয়াত করে বাড়িতে আনতো। আমি যেন বিচার না পেতে পারি, তার জন্য বিগত আমলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি বেনজীর আহমেদ, বিভিন্ন ডিসি এসপিকে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পরিচয় দিয়ে হুমকি দিত। আর আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে, মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে তার বাহিনীর ৬০-৭০ জন নিয়ে উত্তরায় শোডাউন ও মিছিল করে তার অপকর্ম আড়াল করার জন্য।
হাজী তৈয়ব আলী তার আবেদনে ওয়ারিশ বণ্টন নামা অনুসারে তার বাবার জমিতে একটি ফ্ল্যাটের সাথে অর্ধেক অর্ধেক চুক্তিতে নয়-দশ তলার অর্ধেক বুঝিয়ে দেয়ার আবেদন জানান। তিনি সরেজমিন, তদন্ত ও কাগজপত্র যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানান।
তৈয়ব আলী মোল্লা অভিযোগ করেন, তিনি ১৯৮০ সালের আগস্টে কুয়েত গিয়ে সাতাইশ বছর বিদেশে চাকরি করেন। বাড়িতে বাবা-মায়ের চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া সংসার খরচের জন্য প্রতি মাসে যে টাকা পাঠাতেন তা থেকে শরীফ জোর করে টাকা নিয়ে নিত। তার অত্যাচারে ছেলে মেয়েরা ঠিকমত লেখাপড়া করতে পারেনি। যার ফলে তারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার পরও ভালো কোনো চাকরিতে যোগ দিতে পারেনি।

শরীফ হোসেনের জাল জালিয়াতির উল্লেখ করে আর্জিতে তৈয়ব আলী মোল্লা বলেন, প্রথমে আমার পাঁচতলা বাড়ি ভেঙে রেল-ওয়ের বি-ক্লাস জমির ভুয়া কাগজ নকশা পরছা হেবা দলিল বানিয়ে দশ তলা ফ্ল্যাট বানিয়েছে শরীফ। এরপর উত্তরা ২ নম্বর রোডে ফ্ল্যাট কিনেছে। মিরপুর ১০ কাঠা জমি কিনেছে। নরসিংদী শ্বশুরবাড়িতে ধানের জমি এবং ঢাকা সিলেট রোড থেকে দেড় মাইল পাকা রাস্তা বানিয়ে দুই বিঘা জমিতে টাইলস দিয়ে আলিশান রঙমহল বানিয়েছে। নিজের জন্য একটি গাড়ি এবং এয়ারপোর্টে ভাড়ায় চালানোর জন্য দু’টি হাফ লরি কিনেছে। কানাডাতে আলিশান ফ্ল্যাট কিনেছে। মাঝে মাঝে দেশে ধরপাকড় চললে সে পরিবারসহ সেখানে চলে যায়। তৈয়ব উল্লেখ করেন, চোরাচালানের অভিযোগে বিমানবন্দর থানাতে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা আছে। দক্ষিণখান থানাতেও মামলা আছে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মদ্যপ অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি হিসাবে তাকে গ্রেফতার করেছে হাজী ক্যাম্প আর্মি ক্যাম্পের সেনাবাহিনী। উত্তরা চার নম্বর সেক্টর থেকে শরীফ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে উত্তরা পূর্ব থানায় হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী। বিষয়টি নিশ্চিত করেন উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিববুল্লাহ্।
থানা সূত্র জানায়, সাবেক মেয়র আতিক, কাউন্সিলর যুবরাজ, কাউন্সিলর নাঈমসহ একাধিক আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ৫ আগস্টের পর নিজেকে বিএনপিপন্থী নেতা হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় প্রদান করে আর রাজনীতির পালাবদলের সুযোগে উত্তরা চার নম্বর সেক্টর কল্যাণ কমিটির অফিসসহ এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অফিস এবং বাসাবাড়িতে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ভাঙচুর চালায় এবং দখলের অপচেষ্টা করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement