২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পলিথিন-প্লাস্টিক বন্ধে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় চান ব্যবসায়ীরা

দাবি না মানলে রাস্তায় নামার হুমকি
-

পরিবেশ দূষণকারী পলিথিন ও প্লাস্টিক বন্ধে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় চান এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন আলোচনা না করে যদি সরকারের নেয়া কোনো সিদ্ধান্ত প্লাস্টিক সেক্টরকে ক্ষতির মুখে ফেলে তাহলে তাদের রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিয়ে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে প্লাস্টিক ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। তারা প্রয়োজনে এ জন্য সময় চেয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে।
গত ২০ জুন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ১৭টি সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্য ফেইজ আউট করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে প্রথম ধাপে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর থেকে সারা দেশে পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবে সরকার, যার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এ সময় ব্যবসায়ীরা বলেন, পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কোনো আলোচনা করা হচ্ছে না। হুট করেই চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা করে অন্তত ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় দিয়ে যদি এটা করা হয় তাহলে বিষয়টা ভালো হবে এবং ব্যবসায়ীরাও সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু মোতালেব বলেন, বারবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম ও বাসা-বাড়ির ভাড়া বাড়ানো, আগের সরকারের সময়ের চাঁদাবাজিসহ সরকারের দ্বিমুখী সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা এমনিতেই ভালো নেই। এর মধ্যে যদি ব্যবসার ওপর নতুন আঘাত আসে তাহলে সরকারের ট্যাক্স কমে যাবে, ইন্ডাস্ট্রি নতুন করে ক্ষতির মুখে পড়বে, বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতি অনেক নাজুক, প্রয়োজনে ব্যবসায়ীরা কিন্তু পথে নামবেন।
লিখিত বক্তব্যে প্লাস্টিকদ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং প্লাস্টিক ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক সামিম আহমেদ বলেন, যে লক্ষ্যে ২০০২ সালে প্ল্যাস্টিক শপিং ব্যাগ বন্ধ করা হয়েছিল তা গত ২২ বছরে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত মান এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য শপিং ব্যাগের বিকল্প উৎপাদন ও সরবরাহ সম্ভব হয়নি। পরিবেশ বাঁচাতে হলে রিসাইকেল, রিইউজের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে।

প্লাস্টিকের দূষণ কমানো সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, সাগর দূষণের জন্য আমরা দায়ী না। ভারত, নেপাল, চীন থেকে ৫৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়, প্রচুর প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে আসে। এটা আমাদের নদ-নদী ও সাগরে বর্জ্য সৃষ্টি করেছে। সুতরাং সব বর্জ্যরে জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
প্লাস্টিকের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধীরে তিনি বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা আইন অনুযায়ী আয়োডিন লবণ প্লাস্টিক ছাড়া মোড়কীকরণ সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার ভোজ্য তেলের সাথে ভিটামিনে যুক্ত করতে চায়, যা প্লাস্টিক কনটেইনার ছাড়া সম্ভব নয়। তরল দুধ প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছাড়া বাজারজাত সম্ভব নয়। এ ছাড়া গাছের চারা, টেক্সটাইল ও জুট প্যাকেজিংসহ নানান কাজে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক দরকার।
তিনি আরো বলেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধের প্রচেষ্টা চলছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্লাস্টিক খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লিংকেজ হিসেবে অন্যান্য সেক্টরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই আইনের কারণে শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এবং বাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে চিন্তা করেন এটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন কি না। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের তালিকায় এমন কিছু পণ্য আছে যার সাথে জড়িত আছে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। এ খাতের সাথে ১৩ লাখ ক্ষুদ্র বিক্রেতা জড়িত। সরকারের কোষাগারে প্রতি বছর ৪০ হাজার কোটি টাকা জমা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement