পলাতক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি, যোগ দিতে পারবেন না কর্মস্থলে

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য চাকরিতে যোগদান করেননি, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের থানাগুলোতে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্মবিরতিতে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। এরপর পুলিশের আইজি ও ডিএমপি কমিশনার নিয়োগ দেয়ার পর পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদানের নোটিশ দেয়া হয় সদর দপ্তর থেকে। ১৮৭ জন ছাড়া অন্যরা যোগ দেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১৩৬ কনস্টেবল ও ৫১ কর্মকর্তা যোগ দেননি। যোগ না দেয়া কর্মকর্তাদের আর যোগ দেয়ার সুযোগও নেই। এ ছাড়া পলাতক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, পুলিশ সদস্যদের যারা কর্মস্থলে যোগদান করেননি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে। যে ১৮৭ পুলিশ সদস্য ঘোষণা দেয়ার পরও পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেননি, তাদের বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, পলাতক ১৩৬ কনস্টেবলের মধ্যে সরাসরি গুলি করার অভিযোগও রয়েছে। সাবেক ও পুলিশে কর্মরত এমন অন্তত ১০২ জন হত্যা মামলার আসামি রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করা হবে। এরই মধ্যে সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ও সদ্য সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিবির ডিসি মশিউর রহমান, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আবদুল্লাহিল কাফী, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপন ও এসি ইফতেখারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে বেশির ভাগ কর্মকর্তা দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ভারতে পালিয়ে গেছেন। এ ছাড়া দুবাই ও আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন কেউ কেউ।
পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যা মামলা হয়েছে ডিবির সাবেক প্রধান আলোচিত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে রাজধানী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৯টি হত্যা মামলা হয়েছে।

মামলার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন। তার বিরুদ্ধে ৪১টি মামলা হয়েছে। তৃতীয় স্থানে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। তার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়েছে।
মামলার মধ্যে বেশির ভাগই হত্যা মামলা। সব মিলিয়ে কর্মকর্তা, কনস্টেবলসহ অন্তত ১০২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারাও রয়েছেন। মামলার আসামি হিসেবে তাদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের সময় মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের নির্দেশে আন্দোলন দমনে থাকা পুলিশ সদস্যরা গুলি করেন। নির্দেশদাতাদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তার বিরুদ্ধে রাজধানী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৯টি মামলা হয়েছে। হারুন অর রশীদ আমেরিকায় চলে গেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

অন্যদিকে সদ্য সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনিও পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৯টি। এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঢাকায় ১১টি মামলা করা হয়েছে। মনিরুল ইসলাম ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা রয়েছে। এ ছাড়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ৪১টি, শহীদুল হকের বিরুদ্ধে সাতটি, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে তিনটি, সিআইডির মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে দু’টি, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে পাঁচটি, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দু’টি, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দু’টি, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দু’টি, সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে পাঁচটি, অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আটটি হত্যা মামলা হয়েছে।
এর বাইরে ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি জামিল আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, পুলিশ সদর দপ্তরের বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া অতিরিক্ত আইজি লুৎফুল কবীর, সাবেক ডিআইজি খালিদ হাসান ও রিপন সরাবের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলা হয়েছে ৫ আগস্ট ও এর আগে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায়।