২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মামলার হয়রানিতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা

চকরিয়ায় ফৌজদারি আদালতে ৪০ দিনে ৪৫টি ট্রিট ফর এফআইআর আদেশ
-


গত সেপ্টেম্বর ও চলতি অক্টোবরের ১০ দিনসহ ৪০ দিনে ৪৫টি নালিশি আবেদনকে ‘ট্রিট ফর এফআইআর’ হিসেবে গ্রহণ করতে চকরিয়া থানাকে আদেশ দিয়েছেন চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এসব এফআইআরয়ের বেশির ভাগ আসামি হলেন- বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। ফলে হয়রানির শঙ্কায় ভুগছেন এসব নেতাকর্মী।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসকের পতনের পর থানা পুলিশের কর্মকাণ্ড অচল ছিল। সরকার পতনের পর চকরিয়া ও পেকুয়ার বিভিন্ন স্থানে গণবিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসবের মধ্যে বিশেষ করে জমিজমা পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে মারামারির ঘটনা বেশি। ৫ আগস্টের পর বেশ কিছুদিন চকরিয়া ও পেকুয়া থানার কার্যক্রম স্থবির থাকে। সে সময় সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে। এ দিকে থানার কার্যক্রম স্থবির থাকার সুযোগে কথিত ভুক্তভোগিরা চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অনেকগুলো নালিশি আবেদন করে। এতে বেশির ভাগ আবেদনই আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ট্রিট ফর এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করতে আদেশ দেন। বর্তমানে থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও এমন আদেশ কমছে না বলে জানা গেছে।

চকরিয়া থানার রাইটার বাকিবিল্লাহ জানান, গত ৪০ দিনে ৪৫টি ‘ট্রিট ফর এফআইআর’ এসেছে থানায়। অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে এসব নালিশি আবেদন নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু হয়ে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় এফআইআরগুলোতে আসামি হচ্ছেন- বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। ফলে সরকার পরিবর্তন হলেও হয়রানিমূলক মামলা থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী নেতাকর্মীরা।

উপজেলা শ্রমিক দলের সহসভাপতি নাজেমউদ্দিন জানান, ৫ আগস্ট চকরিয়া থানা সদরে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমিনুর রশিদ দুলালের বাড়িতে হামলা করে তার প্রতিপক্ষরা। এ নিয়ে দুলাল কোর্টে নালিশি আবেদন করে। কোর্ট আবেদনটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করতে আদেশ দেন। এ মামলায় আমার পরিবারের প্রধান সব সদস্যকে আসামি করা হয়। কাকারা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবদুল মোনাফ জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে ‘ট্রিট ফর এফআইআর’ নিতে থানাকে আদেশ দেন চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক বলেন, ক্ষমতা পরিবর্তনের পরও যদি বিএনপি-জামায়াতের লোকজন জুডিসিয়ারি হয়রানির শিকার হয়, তাহলে বুঝতে হবে সরকার পরিবর্তন হলেও পতিত সরকারের প্রেতাত্মারা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়ে গেছে। এদের কার্যক্রম উদ্বেগের।
এ দিকে ৫ আগস্টের পর চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও চকরিয়া জুডিসিয়ারি বিভাগের মধ্যে স্নায়ু দ্বন্দ্বের আভাস মিলেছে। গত ১১ সেপ্টম্বর আদালতের সাথে লাগোয়া উপজেলা পরিষদের দাবিকৃত ৩ শতক জমি নিয়ে সৃষ্টি হয় এ দ্বন্দ্ব। ওই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, উপজেলা পরিষদের জমি আদালতের লোকজন আইনজীবীদের সহায়তায় দখল করতে আসলে তিনি নিষেধ করেছেন। নিষেধ না মানায় তিনি চলে যান।

সেই থেকে দুই বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এর জেরে ফৌজদারি আদালতের বেশ কিছু নালিশি মামলার তদন্তভার উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের উপর দেয়া হচ্ছে। তা-ও তদন্তগুলোর সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হলে কারণ দর্শানো হচ্ছে। এতে দারুণ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছেন উপজেলা প্রশাসনের বেশ ক’জন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা।
ফৌজদারি মামলার তদন্তপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য ফৌজদারি অপরাধ ও আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অভিজ্ঞতাও প্রয়োজন। যাদের নিকট নালিশি আবেদনের তদন্ত আসছে তারা তো ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত বিষয়ে জানেন না বললে চলে। এগুলো তদন্তের জন্য পুলিশ আছে, না হয় অন্যান্য সংস্থার লোকজনকে প্রদান করা হলে ভালো হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement